নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা: নগরীর খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী গ্রামে বহুল আলোচিত ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিন পরে আসামিদের ব্যবহৃত অস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ। এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে খুলনায় দুইটি দেশে তৈরি ওয়ান স্যুটার গান, দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ এবং তিন রাউন্ড ফায়ার্ড কার্তুজ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. জাফরিন শেখের স্বীকারোক্তি অনুসারে রোববার (২ আগস্ট) রাত সাড়ে আটটার দিকে অভিযানে নামে খুলনা মহানগর ডিবি’র ইন্সপেক্টর এনামুল হকের নেতৃত্বে একটি টিম। জাফরিন ট্রিপল হত্যাকাণ্ড মামলার মূল আসামিদের একজন এবং হোতা জাকারিয়া ও মিল্টনের ভাই। পুলিশ আসামিদের মশিয়ালী গ্রামের বাড়িতে ঢোকার প্রাচীরের পূর্বপাশের শেখ বাড়ির কবরস্থানে তিন রাউন্ড ফায়ার্ড কার্তুজ এবং গ্রামের সরদার বাড়ির পেছনে পশ্চিমদিকে রেইনট্রি গাছ সংলগ্ন ডোবায় প্লাস্টিকের বাজারের ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো দুইটি দেশে তৈরি ওয়ান স্যুটার গান ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ পায়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কানাই লাল সরকার জানান, আটক আসামি মো. জাফরিন শেখের স্বীকারোক্তি অনুসারে মূল আসামি তিন ভাইয়ের বাড়ির পাশ থেকে এসব অস্ত্র জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
গত ১৬ জুলাই রাতে মশিয়ালি ইস্টার্ন গেট এলাকায় তিন সহোদর জাকারিয়া, জাফরিন ও মিল্টন বাহিনীসহ আরো ১০/১২ জন স্থানীয়দের উপর গুলিবর্ষণ করেন। গুলিতে নিরীহ তিনজন এলাকাবাসী মো. নজরুল ইসলাম (৬০), গোলাম রসুল (৩০) ও মো. সাইফুল ইসলাম নিহত এবং আফসার শেখ, শামীম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ আরও কয়েকজন আহত হন। এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে রাত ২টার দিকে জাকারিয়া, জাফরিন ও মিলটনের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেন এবং হামালাকারীদের একজন জিহাদ শেখকে (৩০) গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলেন।
এ ঘটনায় নিহত সাইফুলের বাবা সাইদুল ইসলাম খানজাহান আলী থানায় মামলাটি করেন। মামলায় খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহ প্রচার সম্পাদক শেখ জাকারিয়া হোসেন জাকার, তার ভাই মহানগর ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ সভাপতি শেখ জাফরিন, অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি মিল্টনসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১৫/১৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
১৮ জুলাই বিকালে মূল অভিযুক্ত শেখ জাকারিয়ার ভাই শেখ জাফরিন হাসানকে এবং ১৭ জুলাই জাফরিনের ভাই জাকারিয়ার শ্বশুর কোরবান আলী, শ্যালক আরমান ও চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে তারা এখন কারাগারে।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামকে ২১ জুলাই সোয়াটে বদলি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই লুৎফুল হায়দারকে পরিবর্তন করে ওসি (তদন্ত) কবীর আহমেদকে তদন্তের দ্বায়িত্বভার দেওয়া হয়। ২৬ জুলাই এ মামলার তদন্তভার কেএমপি ডিবি'র ইন্সপেক্টর এনামুল হকের কাছে হস্তান্তর করে।
সার্বিক বিষয় তদন্তে পুলিশ কমিশনার এস এম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশিকিউশন) মো. আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কানাই লাল সরকার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) শিপ্রা রাণী দাস। গত ২২ জুলাই থেকে তদন্ত কমিটি ঘটনার তদন্ত করছে।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। গ্রেপ্তার হননি মামলার প্রধান আসামি জাকারিয়া জাকার ও তার ভাই মিল্টনসহ এজাহারভুক্ত ১৮ জন। এতে এলাকাবাসী খুবই আতঙ্কিত।
সান নিউজ/ এআর