নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার জেলার টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে সেনাবাহিনীর মেজর (অব:) সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত। সে সময় টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় ডকুমেন্টারি ফিল্মের শ্যুটিং শেষে ফিরছিলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। সেনাবাহিনীর 'এএসইউ'র সার্জেন্ট আইয়ুব আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গুলিবিদ্ধ মেজর সিনহার ছবি তুলতে চাইলে তার পরিচয়পত্রসহ মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ।
সরকারের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
অন্যদিকে, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মনোনীত একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি। ঊর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশে শনিবার (১ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহে এলিদ মাইনুল আমীন স্বাক্ষরিত চিঠিটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তার বাবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব মুক্তিযোদ্ধা মো. এরশাদ খান। এর পর থেকে 'জাস্ট গো' ইউটিউব চ্যানেলের জন্য বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ভিডিও তৈরি করতেন।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউটিউব চ্যানেলের জন্য নির্মিতব্য ভ্রমণ সহায়ক ডকুমেন্টারির শ্যুটিংয়ের কাজ করছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। গত ৩ জুলাই ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া' বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শ্যুটিংয়ের উদ্দেশ্যে টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় যান তিনি। প্রায় একমাস বিভিন্ন এলাকায় চিত্রধারণ শেষে গত ৩১ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে পাহাড় থেকে ফেরার পথে স্থানীয় কয়েকজন তাদের 'ডাকাত' সন্দেহ করে পুলিশকে অবহিত করেন।
পাহাড় থেকে নেমে মেজর সিনহা ও সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থী সিফাত নিজস্ব প্রাইভেটকারে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার জেলা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে শামলাপুর বিজিবি চেকপোস্টে তাদের তল্লাশি ও পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাত ৯টায় শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে এসআই লিয়াকত তাদেরকে থামান। এ সময় মেজর সিনহা তার পরিচয় দিলে প্রথমে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন লিয়াকত। কিন্তু পুনরায় গাড়িটি থামিয়ে মেজর সিনহা ও সিফাতের দিকে পিস্তল তাক করে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলার সুযোগ না দিয়েই সিনহার বুকে পর পর তিন রাউন্ড গুলি করেন লিয়াকত।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গুলি করার পর রাত আনুমানিক ৯টা ৪০ মিনিটে স্থানীয় লোকজন ও সেনাবাহিনীর 'এএসইউ'র একজন সার্জেন্ট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মেজর সিনহাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এএসইউ' র ওই সদস্য নিজের পরিচয় দিয়ে সিনহার গুলিবিদ্ধ অবস্থার একটি ছবি তুলতে চাইলে তার পরিচয়পত্রসহ মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশের একটি মিনি ট্রাকে করে রাত ১টা ৪৫ মিনিটে মেজর সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মেজর সিনহার সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থী সিফাতকে আটক করে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, তাদের গাড়ি থেকে ইয়াবা ও গাঁজা জব্দ করা হয়ে। তাদের হোটেলের কেবিনেও দেশি-বিদেশি মদ ও গাঁজা পাওয়া গেছে।
সান নিউজ/ এআর