নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা: খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ, জাকারিয়া-জাফরিন ও মিল্টন বাহিনীর গুলিতে নিরীহ তিনজন নিহত, গুলিবিদ্ধ আহত ৭ জন এবং ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে হামলাকারীদের একজন নিহতের ঘটনায় অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি ।
বুধবার (২২ জুলাই) চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে এসে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) এস এম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটির সদস্য অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কানাই লাল সরকার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) শিপ্রা রাণী দাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নেন। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. আনোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও হামলায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার হননি মামলার প্রধান আসামি জাকারিয়া হোসেন জাকার ও তার ভাই মিল্টনসহ এজাহারভুক্ত ১৮ জন আসামি। তবে ট্রিপল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত মহানগর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ সভাপতি শেখ জাফরিন হাসান, জাহাঙ্গীর, আরমান ও রহিম রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে সুত্রে জানা গেছে।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত কয়েকজন গত ১৬ জুলাইয়ের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নেপথ্যের বর্ণনা দেন। এলাকার মানুষ জাকারিয়া-জাফরিন-মিল্টন বাহিনীর ঘটনার দিনসহ বহু নির্যাতন, নীপিড়ন, হামলা, মামলা ও অপরাধের সাম্রাজ্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষ জাকারিয়া-জাফরিন-মিল্টন বাহিনীর বহু নির্যাতন, নীপিড়ন, হামলা, মামলার শিকার হয়েছেন। তাদের নির্যাতনে এলাকার সাধারণ মানুষ আইনশৃঙ্খলঅ বাহিনী বা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকেও সহযোগিতা পাননি। এমনকি তাদের বিরদ্ধে প্রতিবাদ বা কথা বলার সাহস পাননি। জাকারিয়া-জাফরিন-মিল্টন বাহিনীর সদস্যদের অপরাধের বিষয়ে কেউ কিছু বললে তাকেও নির্যাতন, নীপিড়নসহ হামলা-মামলা করতেন ওই তিন সহোদর।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও প্রধান আসামি জাকারিয়া ও মিল্টন গ্রেপ্তার না হওয়ায় এবং অবৈধ অস্ত্রগুলো পুলিশ এখনও উদ্ধার করতে না পারায় তারা আতঙ্কিত।
তদন্ত কমিটির সদস্য অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) কানাই লাল সরকার বলেন, মশিয়ালীতে জাকারিয়া-জাফরিন ও মিল্টন বাহিনীর হামলায় গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় নিহত সাইফুলের পিতা সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে খানজাহান আলী থানায় মামলা করেন। মামলায় থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহ প্রচার সম্পাদক শেখ জাকারিয়া হোসেন জাকার, তার ভাই মহানগর ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ সভাপতি শেখ জাফরিন, অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মিল্টনসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ১৫/১৬ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার চার আসামি গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে রয়েছেন।
গত ১৬ জুলাই রাতে মশিয়ালি ইস্টার্ন গেট এলাকায় জাকারিয়া, জাফরিন ও মিল্টনের গুলিতে নজরুল ফকির, গোলাম রসুল ও সাইফুল নিহত হন। জনতা ওই তিনজনের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে জ্বালিয়ে দেন এবং জাকারিয়ার আত্মীয় জিহাদ শেখকে (৩০) গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলেন। এ ঘটনার পর গ্রামবাসী পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করায় খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামকে সোয়াটে বদলি ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই লুৎফুল হায়দারকে পরিবর্তন করে ওসি (তদন্ত) কবীর আহমেদকে তদন্তের দ্বায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে।
সান নিউজ/ এআর