সান নিউজ ডেস্ক : ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) একযোগে দেশের ৬৩ জেলার ৫০০ পয়েন্টে সিরিজ বোমা হামলা চালায়।
আরও পড়ুন : বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ও শনাক্ত আরও বেড়েছে
আজ বুধবার (১৭ আগস্ট) সেই সিরিজ বোমা হামলার ১৭ বছরপূর্তি। মুন্সিগঞ্জ জেলা ব্যতিত সকল জেলাগুলোয় সিরিজ বোমা হামলায় দুজন নিহত হন, আহত হন ১০৪ জন।
জেএমবি’র সিরিজ বোমা হামলার ১৭ বছরেও দেশ থেকে জঙ্গি হামলার আতঙ্ক যায়নি। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে জঙ্গি সদস্য।
তবে জঙ্গিরা তাদের প্রচারণা ও কার্যক্রম অনলাইন মাধ্যমে পরিচালনা করছে। অনলাইনেই তারা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ীতে ২০০০ সালে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে জেএমবি কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটায়।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশ সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে নেই
উত্তরবঙ্গের রাজশাহীতে প্রকাশ্যে জঙ্গি কার্যক্রম, গাজীপুরে আদালত প্রাঙ্গণে বোমা হামলা, ঝালকাঠিতে বিচারকদের ওপর বোমা হামলা, নেত্রকোনায় উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলাসহ ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জেএমবির জঙ্গি কার্যক্রম দেশি বিদেশি গণমাধ্যমে আলোচনা বিষয় স্থান করে নেয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না যে, জেএমবির কার্যক্রম একেবারে শেষ হয়ে গেছে। জেএমবি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেষ্টা করছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবস্থান জানান দেয়।
আরও পড়ুন : নিহতদের জন্য ৫ কোটি টাকা চেয়ে রিট
ভারতের ব্যাঙ্গালুরু থেকে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট জেএমবির দুর্ধর্ষ পলাতক জঙ্গি বোমারু মিজানকে গ্রেফতার করে ঐ দেশের এনআইয়ে টিম। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর বোমা হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
একই বছরের ২৭ মে মালিবাগে পুলিশ ভ্যানে বোমা হামলায় একজন পথচারী আহত হয়। একই বছরের ২৩ জুলাই রাতে খামারবাড়ী ও পল্টন পুলিশ বক্সে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দুইটি শক্তিশালী আইইডি যুক্ত বোমা ফেলে রেখে যায়।
আরও পড়ুন : উত্তরায় নিহত ৪ জনের দাফন সম্পন্ন
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার (মুন্সীগঞ্জ ব্যতীত) ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৯টি মামলা দায়ের হয়।
এসব মামলায় ৫৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। হামলার ১৮ বছরের মধ্যে ১১৮টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। ৪১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে এসব মামলায় ৭৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়।
১৯৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। গ্রেফতারকৃত আসামির মধ্যে ২৮১ জনকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড রায় দেয়া হয়েছে ১৫ জনকে।
আরও পড়ুন : মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৪৪
ঢাকা মহানগর আদালত সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় ঐ সময় ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়। এই ১৮টি মামলায় পুলিশ ও র্যাব ৯১ জনকে গ্রেফতার করে। ৫৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দেয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকার আদালতে ১৮টি মামলা ছিল। বর্তমানে চারটি মামলা বিচারাধীন আছে। সেগুলোও সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, সাক্ষীদের অনুপস্থিতিই মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন : আইজিপি জেনে শুনেই যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন
সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। চাঞ্চল্যকর এসব মামলা চাইলেই তো শেষ করে দেওয়া যায় না।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাবের অভিযানেই জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, আসাদুল ইসলাম আরিফসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেফতার হয়।
তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। তাদের ফাঁসির রায়ও সরকার কার্যকর করেছে। এ কারণে আমরা খুব অল্প সময়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি।
সান নিউজ/এইচএন