নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাহেদ একজন উচ্চ মানের প্রতারক। সে প্রতারণাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের কল্পনাতীত। প্রতারণার জগতে সাহেদ একজন আইডল। প্রতারণাকে ব্যবহার করে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঠগবাজি করে কীভাবে এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে, যা একটি অনন্য খারাপ দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দুপুরে র্যাব সদর দফতরে ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. ক. আশিক বিল্লাহ।
সাংবাদিক, রাজনীতিক, আমলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সাহেদের ছবি থাকার বিষয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাহেদের ছবির বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা দরকার। কারও সঙ্গে কারও ছবি থাকা মানে এই নয় যে, তিনি তার পৃষ্ঠপোষক। যে কারও সঙ্গে বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মানুষ ছবি তুলতে চাইবেই। এটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তার মানে এই নয় যে, ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সাহেদকে একজন প্রতারক জেনেও তার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন কারও সঙ্গে ছবি তোলেন সেটি নেহায়েত সৌজন্যবশত। এর পেছনে যদি কারও পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, সেটি নিশ্চয়ই তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে খতিয়ে দেখবেন।’
র্যাবের কর্মকর্তা বলেন,‘আমাদের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত ছিল, যাতে সে কোনোভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারে, তাই সে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারেনি।’
রিজেন্ট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও জাল সার্টিফিকেট
সাম্প্রতিক সময়ে র্যাবের কাছে আরও অভিযোগ রয়েছে, রিজেন্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের জাল সনদ দেওয়া হতো। র্যাবের পরিচালক আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। যে সনদগুলো শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে, তা জাল। এই সনদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিজীবন ও শিক্ষাজীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’
সাহেদের সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে
এই ঘটনায় সাহেদ ছাড়াও অন্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলে জানিয়েছে র্যাব। মূল তদন্ত কর্মকর্তা সব অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ মামলার অন্যান্য আসামিরা এই মুহূর্তে পলাতক রয়েছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা।
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সাহেদ গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করতো। আমরা তার গানম্যান ও তাদের অস্ত্রের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তার পাঁচ থেকে সাত জনের গানম্যানের দল ছিল। তাদের সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের অস্ত্রের উৎস ও অস্ত্রের বৈধতা খতিয়ে দেখছি।’
সাহেদের সিনেমেটিক চেক জালিয়াতি
মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করীম বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে চেক নিয়েও প্রতারণা করেছে। যা ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও বিস্মিত করেছে। র্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সাহেদ পাওনাদারদের যে চেক দিতো, তাতে একেক চেকে একেক স্বাক্ষর করতো। সত্যিকারের স্বাক্ষর সে দিতো না— যা ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিস্মিত করেছে। এসব চেক ব্যাংক থেকে বাউন্স হয়েছে। এই জালিয়াতির ঘটনায় অভিজ্ঞ ব্যাংকাররাও অবাক হয়েছেন। সাহেদ তার বৈধ চেকে অবৈধ স্বাক্ষর করেছে। অর্থাৎ ব্যাংকে তার যে স্বাক্ষর রক্ষিত আছে, সেই স্বাক্ষর না দিয়ে ভিন্ন স্বাক্ষর দিতো। তাই পাওনাদাররা ব্যাংক থেকে ওই চেক দিয়ে টাকা তুলতে পারেনি। সব চেক ব্যাংকে ডিসঅনার হয়েছে।’
অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে সাহেদের বিরুদ্ধে
সারা দেশে সাহেদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত র্যাব অর্ধশতেরও বেশি মামলার খবর পেয়েছে, যার বেশিরভাগই প্রতারণার। তার বিষয়ে র্যাব আরও খোঁজ-খবর নিচ্ছে। যদি কারও অভিযোগ থাকে তাহলে র্যাবকে জানানোর অনুরোধ জানান পরিচালক আশিক বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এতে তদন্তে আমাদের সুবিধা হবে।’
র্যাবের হুঁশিয়ারি
সাহেদের মতো যদি এরকম আর কোনও প্রতারক থেকে থাকে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে র্যাব তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন আশিক বিল্লাহ।
এ সময় তিনি জানান, সাহেদের মতো প্রতারণায় অন্য যারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
সান নিউজ/ বি.এম.