মোঃ রাশেদুজ্জামান রাশেদ,পঞ্চগড় প্রতিনিধি : আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (৩২) কে বগুড়া জেলার মোকামতলা বন্দর থেকে গ্রেফতার করেছে আটোয়ারী থানা পুলিশ।
আরও পড়ুন : স্বর্ণের দামে বড় পতন
শুক্রবার (১৫ জুলাই) ভোর চারটার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর দিকনির্দেশনায় ও আটোয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সোহেল রানার পরামর্শ মোতাবেক এসআই শাহীন আল মামুন এর নেতৃত্বে একটি চৌকস পুলিশ দল বগুড়ার শিবগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে অভিযান চালিয়ে আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
সাজাপ্রাপ্ত আলাউদ্দিন পঞ্চগড় জেলা আটোয়ারী উপজেলা মির্জাপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের (ভূমি অফিস পাড়া) হবিবর রহমানের পুত্র।
অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা জানান, গত ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন দুস্কৃতিকারীরা ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের পর আলাউদ্দিন আত্মগোপন করেন।
আরও পড়ুন : খেলা হবে
পুলিশের নথিতে পলাতক আলাউদ্দিন তার স্ত্রীসহ ৭ জুলাই ঈদের ছুটিতে মোকামতলা বন্দরে শ্বশুরবাড়ীতে বেড়াতে আসেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেখানকার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আলাউদ্দিনের শ্বশুরবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলাউদ্দিন জানিয়েছে, স্ত্রী নাহিদ ফেরদৌস টেকনাফে আলাদা দুটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরী করেন। বিশ্বজিৎ হত্যকান্ডের আগে থেকেই আলাউদ্দিন ও নাহিদা ফেরদৌস এর পরিচয় ছিল। ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন।
বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের পর আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেয়। পরবর্তিত্বে পরিচয় গোপন করে প্রথমে গাজিপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী নেন। আলাউদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং সেখানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আরও পড়ুন : 'আমাদের' সাইমন ড্রিংয়ের প্রথম প্রয়াণ বার্ষিকী
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পেটান ও কোপান। বাঁচার জন্য দৌড় দিলে তিনি শাঁখারী বাজারের রাস্তার মুখে পড়ে যান।
রিক্সা চালক রিপন তাকে রিক্সায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষনা করেন।
ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ লক্ষী বাজারের বাসা থেকে শাঁখারী বাজারে নিজের দোকানে যাচ্ছিলেন। বিশ্বজিৎ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর গ্রামের দাসপাড়া মহল্লার বাসিন্দা অনন্ত দাসের ছেলে।
আরও পড়ুন : টাঙ্গাইলে বাসচাপায় ২ শিশুসহ মায়ের মৃত্যু
এ ঘটনায় ওই দিন সুত্রাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের ৮ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ মামলায় রায় দেন। রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদন্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।
আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে মৃত্যুদন্ড পাওয়া আট আসামীর মধ্যে দুজনের মৃত্যুদন্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদন্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করেন তারা খালাস পেয়েছিলেন।
এদিকে আটোয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সোহেল রানা বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামি আলাউদ্দিনকে শনিবার (১৬ জুলাই) সকালে পঞ্চগড় বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন