মোহাম্মদ জুবাইর, চট্টগ্রাম: রাঙ্গামাটিতে নিজ প্রেমিকাকে নৃশংস ও নির্মমভাবে হত্যা এবং মৃতদেহ পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলার ঘাতক পাষন্ড প্রেমিককে নেত্রকোনা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
আরও পড়ুন: মানুষের কষ্ট লাঘবে চেষ্টা করছে সরকার
নিহত ভিকটিম হাছিনা বেগম সুমীর (২৮) সাথে মোঃ ইমাম উদ্দিন (৫০) এর আনুমানিক ১২ বছর আগে বিবাহ হয়। তারা ১০ বছরের একটি কন্যা সন্তান দত্তক হিসেবে লালন পালন করত এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করে আসছিল।
ভিকটিম গত ১১ মার্চ রাঙ্গুনিয়া থানাধীন দুভাষী বাজারস্থ ভাড়া বাসা হতে কাজের জন্য কাপ্তাই নতুন বাজার এলাকায় গিয়ে আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে ভিকটিমের মা তার মোবাইল বন্ধ পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে। পরদিন ১২ মার্চ বিকাল অনুমান সাড়ে পাঁচ ঘটিকায় ভিকটিমের মা জানতে পারেন যে, কাপ্তাই থানাধীন ৪ নং ইউপিস্থ বিএফআইডিসি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের পরিত্যাক্ত টয়লেটের ভিতর একটি অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ পাওয়া গিয়েছে।
উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ভিকটিমের মা তার দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে উল্লেখিত জায়গায় পৌছায় এবং মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে দাহ্য পদার্থ দ্বারা আগুন দিয়ে বিকৃত অবস্থায় তার মেয়ে নিহত হাছিনা বেগম সুমী (২৮) এর লাশ বলে সনাক্ত করে।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা আমেনা বেগম বাদী হয়ে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই থানায় ৩ জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে, যার মামলা নং-৪, (১৩ মার্চ) ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। উক্ত ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেট্রিক মিডিয়াসহ ভিকটিমের এলাকা তথা সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: বনানীতে চিরনিদ্রায় সাবেক রাষ্ট্রপতি
মামলা রুজু হওয়ার পর মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও জড়িত প্রকৃত আসামী সনাক্তসহ গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী এবং কঠোর ছায়া তদন্ত শুরু করে। নজরদারির এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, উক্ত নৃশংস ও নির্মমভাবে হত্যা এবং মৃতদেহ পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলার সাথে সরাসরি জড়িত আসামি মাহিবুর কামাল (২৩) নেত্রকোনা জেলার মদন থানা এলাকায় আত্মগোপন করে আছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল গত ১৯ মার্চ টার দিকে ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মাহিবুর কামাল (২৩) রাঙ্গামাটিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উক্ত আসামি গ্রেফতার এড়ানোর জন্য ঘটনার পর হতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে এবং সর্বশেষ নেত্রকোনায় আত্মগোপন করেও র্যাব সদস্যদের বিচক্ষণতার কারণে গ্রেফতার এড়াতে পারেনি।
আরও পড়ুন: রুশ আগ্রাসনে শিশুসহ নিহত ২২৮
আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে অকপটে স্বীকার করে যে, নিহত ভিকটিমের সাথে আসামি মাহিবুর কামালের পরকীয়ার সর্ম্পক ছিল এবং তাদের মধ্যে সুসর্ম্পক গড়ে উঠে। কিন্তু আসামি মাহিবুরের সাথে অন্য এক মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়। এই সংবাদ শুনে নিহত ভিকটিম গত ১১ মার্চ আসামি মাহিবুরকে ফোন করে কাপ্তাইয়ের ৪নং ইউপিস্থ বিএফআইডিসি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে আসতে বলেন।
ভিকটিমের কথা মত আসামি মাহিবুর বর্ণিত জায়গায় আসে এবং উক্ত স্কুলের পাশে একটি পরিত্যাক্ত টয়লেটে ভিতর দেখা করেন। পরবর্তীতে রাত আনুমানিক দশ ঘটিকার সময় ভিকটিম আসামি মাহিবুরকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আসামি কোন অবস্থাতেই ভিকটিমকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় ভিকটিম আসামিকে বলে যে, বিয়ে না করলে তাদের সম্পর্কের কথা এলাকায় জানিয়ে দিবে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় বিনিতেই আবদ্ধ ম্যাক্সওয়েল
একপর্যায়ে আসামি ভিকটিমের কথায় রাগান্বিত্ব হয়ে ইট দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করেন। ভিকটিম আসামির ইটের আঘাত সহ্য করতে না পেরে আসামির হাতে কামড় দিলে আসামি আরও রাগান্বিত্ব হয়ে ইট দিয়ে ভিকটিমের মাথায় উপর্যুপুরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং ঘটনাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য ভিকটিমের গায়ে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন লাগিয়ে ও হত্যা সংক্রান্ত সকল আলামত নষ্ট করে চলে যায়।
উক্ত আসামিকে গ্রেফতারের ফলে র্যাবের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভুক্তভোগীর পরিবার সুবিচার পাওয়ার পথ তরান্বিত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে রাঙ্গামাটি জেলার সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সান নিউজ/এমকেএইচ