নিজস্ব প্রতিবেদক:
জোরপূর্বক এক নারীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে চাঁদা দাবির অভিযোগে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ চার যুবককে গ্রেফতার করেছে।
শুক্রবার সকালে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযুক্ত ওই চারজনকে গ্রেফতার করে। এসময় অভিযুক্তদের কাছে থেকে আপত্তিকর ওই ভিভিও জব্দ করে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলো, সানি মুন্সি, মো. শাওন, মো মারুফ বিল্লাহ ও সোহান।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভিকটিম ও তার স্বামী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, বর্তমানে তারা ঝিনাইদহ শহরে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। ভিকটিমের স্বামী পেশায় ইলেকট্রিক মেকানিক। গত ১৮ জুন সন্ধ্যার দিকে তার ইলেকট্রিক কাজের সহকারি এক কিশোরকে দিয়ে বাসায় বাজার পাঠান। ওই সহকারি বাসায় গিয়ে দরজায নক করলে ভিকটিম দরজা খুলে দেন। তখন ওই সহকারির পেছন পেছন এলাকার বখাটে ও মাদকসেবী সানি মুন্সি, মো. শাওন, মো. মারুফ বিল্লাহ ও সোহান অতর্কিতে ওই বাসার ভেতরে ঠুকে পড়ে।
ভিকটিমের মেয়ে পাশের কক্ষে ছিল। অভিযুক্তরা মেয়েকে পাশের কক্ষে আটকে রেখে ভিকটিম ও ওই কিশোরকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখায়। এরপর ওই চার যুবক কিশোরের পোশাক খুলে ভিকটিমের পাশে বসিয়ে ছবি তোলেন। এরপর আরো ‘আপত্তিকর কাজ’ করতে বললে তাতে রাজী না হওয়ায় ওই কিশোরকে মারধর করে তারা।
পরবর্তীতে ওই যুবকরা ভিকটিমকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হয়ে জোর করে ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে ছবি তোলে ও ভিডিও করে। এরপর, এসব কথা কাউকে না জানাতে শাসিয়ে যায়। এসব কথা কাউকে জানালে ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া ও আরো বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দেয়।
ভিকটিম ও তার স্বামী অভিযোগে আরো বলেন, মান-সম্মানের ভয়ে শুরুতে বিষয়টি কাউকে জানানো থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু ঘটনার পর ওই যুবকরা ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি শুরু করলে তারা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন।
গতকাল বিকেল ৫ টার দিকে ভিকটিম ও তার স্বামীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই অভিযুক্তদের ধরতে অভিযানে নামে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ। মাত্র দেড় ঘন্টার মধ্যেই অভিযুক্ত চার যুবককে গ্রেফতার করে তারা। এ সময় ভিকটিমের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওসহ চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
ঘটনার বিষয়ে ওই চার যুবকের দেয়া তথ্য থেকে জানান যায়, অনেকদিন ধরেই ভিকটিমকে টার্গেট করেছিলেন তারা। কিন্তু সুযোগ না পেয়ে বাসায় ঢুকতে পারেননি। ঘটনার দিন ওই সহকারী বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার পথে তাকে অনুসরণ করেন তারা। সহকারি ঘরে ঢোকার পর দরজা খোলা পেয়ে তারাও বাসার ভেতরে ঢুকে পড়েন।
শুরুতে পরিকল্পনা ছিল, ভিকটিম ও সহকারির আপত্তিকর ছবি তুলে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা। কিন্তু সহকারি তাতে রাজি না হওয়ায়, তারা ধর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে সফল না হয়ে ভিকটিমকে জোর করে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে ও ভিডিও করে।
অভিযুক্তরা জানায়, মাদকের টাকা সংগ্রহের জন্য চাঁদাবাজি এবং পরবর্তীতে ভিকটিমের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য এটা করেছে তারা। এ ঘটনায় ওই চার যুবকের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে পুলিশ।
এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী ও বখাটেদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান নেমেছে জেলা পুলিশ।
সান নিউজ/সালি