নিজস্ব প্রতিনিধি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে পাস করা এক মেধাবী শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের বিরুদ্ধে। নিহতের নাম সুমাইয়া খাতুন। সোমবারের (২২ জুন) এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মঙ্গলবার তার শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা আক্তার ও ননদ জাকিয়া ইয়াসমিন যুথিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পলাতক বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
শিক্ষক কিংবা বিসিএস ক্যাডার হতে চেয়েছিলেন সুমাইয়া খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এই মেধাবী শিক্ষার্থী বরাবরই লেখাপড়ায় প্রথম শ্রেণি পেয়ে এসেছিলেন। কিন্তু, সুমাইয়ার ইচ্ছাপূরণে এমনই বাধা এলো যে প্রাণ হারিয়ে পৃথিবী ছেড়েই চলে যেতে হলো তাকে।
সোমবার নাটোর সদর উপজেলার হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে মৃত্যু হয় মেধাবী শিক্ষার্থী সুমাইয়ার। হাসপাতালে তার লাশ উদ্ধারের পর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন সুমাইয়ার মা নুজহাত সুলতানা।
এ মামলায় মঙ্গলবার (২৩ জুন) রাতে সুমাইয়ার শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা আক্তার ও ননদ জাকিয়া ইয়াসমিন যুথিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। নুজহাত সুলতানার দাবি, সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক ও তার পরিবারের লোকজন তার মেয়েকে হত্যা করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মতিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলায় নিহতের স্বামী মোস্তাক হোসাইন, শ্বশুর জাকির হোসেন, শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা আক্তার ও ননদ জাকিয়া ইয়াসমিন যুথির নাম উল্লেখ করে ও কয়েকজন অজ্ঞাতকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মামলায় বাদী দাবি করেছেন, তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আসামিরা সাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্ট করে এটাকে আত্মহত্যা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। নিহতের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
পরে দুই আসামিকে গ্রেফতারের পর তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিকেলে শহরের বড়হরিশপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সন্ধ্যার পর তাদের কোর্টে চালান দেওয়া হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনি ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
নিহত সুমাইয়ার চাচা আব্দুল মোমিন জানিয়েছেন, পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে গত বছরের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিনে মোস্তাকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুমাইয়ার। মোস্তাক একটি কোম্পানিতে চাকরি করতো। তবে সে চাকরি ছেড়ে এখন বেকার।
সুমাইয়া বিয়ের পর নিজ বাড়ি ও মাঝে মাঝে শ্বশুরবাড়িতে থাকতো। গত সেপ্টেম্বরে তার বাবা মারা যায়। তারপরও তার পড়ালেখার খরচ নিজ পরিবার থেকে বহন করতে চাওয়ায় সম্প্রতি সুমাইয়া বিসিএস কোচিং করতে ঢাকায় যেতে চায়। কিন্তু, এতে বাধা দেয় স্বামী মোস্তাক ও তার পরিবার। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, সুমাইয়া গর্ভধারণ করেছিল। কিন্তু, ১৫-২০ দিন আগে ৬-৭ মাসের সেই শিশুকে জন্মদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে জোর করে গর্ভপাত ঘটায় মোস্তাক। এরপর থেকে সুমাইয়া অসুস্থ অবস্থায় বাবার বাড়ি থাকতো। ২-৩ দিন আগে মোস্তাক তার শাশুড়িকে ফোন করে বাড়ির কাজ করার কথা বলে সুমাইয়াকে পাঠাতে বলে। তাতে অসম্মতি জানানোয় মোস্তাক রেগে যায়। সুমাইয়াকে বকা দেওয়ার পর শনিবার এসে তাকে নিয়ে যায়।
সোমবার সকালে শ্বশুর জাকির হোসেন ফোন করে সুমাইয়ার মা নুজহাতকে বলে, তার মেয়ে অসুস্থ, হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে সুমাইয়ার মরদেহ দেখতে পায়। কিন্তু, সেখানে মোস্তাকের পরিবারের কেউ ছিল না। তারা সুমাইয়ার গলা ও হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। ঘটনাটি সদর থানাকে জানালে পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
তার মা নুজহাত সুলতানা বলেন, ‘সুমাইয়া কোনও কারণেই আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নয়। ওর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে ওই পরিবারের কাউকে পাইনি। তারা হত্যার পর পালিয়েছে। আমি আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
প্রসঙ্গত, জেএসসি থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স -মাস্টার্স সব পর্যায়ে তাক লাগানো ফল ছিল সুমাইয়ার। সব কিছুতেই ফার্স্ট ক্লাস। ঢাবিতে ইসলামি স্টাডিজ বিষয়ে সর্বোচ্চ ভালো ফলাফলের জন্য ৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। সুমাইয়া তাদের একজন।