কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করায় প্রকল্পের দুই জেন্ডার প্রোমোটারকে চাকরিচ্যুত করে বিধি বর্হিভূতভাবে আত্মীয়দের ওই পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম বর্হিভূতভাবে চাকুরিচ্যুত ও আত্মীয়দের চাকুরি দেয়ায় ভুক্তভোগীরা রোববার (৩০ জানুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধিনে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত কিশোর কিশোরী ক্লাব স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে ওই দুইজন জেন্ডার প্রোমোটার (প্রশিক্ষক) হিসাবে ২০১৯ সাল থেকে কর্মরত ছিলেন। হঠাৎ করে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি প্রকল্পের ফিল্ড সুপারভাইজার এনামুল হক মুুঠোফোনের মাধ্যমে তাদেরকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানান। অব্যাহতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা উপরের নিদের্শ। অব্যাহতি দেয়ার পূর্বে নিয়ম অনুযায়ী শোকজ নোটিশ পাওয়ার কথা কিন্তু তা তারা পাননি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস
এদিকে, ২১ জানুয়ারি ওই দুই জেন্ডার প্রোমোটার কর্মস্থলে উপস্থিত হলে জানতে পারেন তাদের পরিবর্তে নতুন দুইজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগকৃতরা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বোনের স্বামী পার্শ্ববর্তী চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ও নিকট আত্মীয় আব্দুল মজিদ। তারা ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত লিখিত, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। ফলে তারা প্যানেলভুক্ত প্রার্থী নন।
চাকুরিচ্যুত জেন্ডার প্রোমোটার শাহানুজ্জামান ও আংগুর মিয়া জানান, ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লিখিত, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরের ২৪ নভেম্বর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগদান করি। একই সময় এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ১৪টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: উলিপুরে উদীচীর ২২তম সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা
চাকুরিকালীন ২০২১ সালে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থীদের নাস্তার বরাদ্দকৃত টাকা ও ক্লাব কো-অর্ডিনেটর, শিক্ষক ও জেন্ডার প্রোমোটারদের মাসিক ভাতা মন্ত্রনালয় কর্তৃক বরাদ্দ দেয়া হলে তা উত্তোলন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা টাকা বিতরণ না করে মাসের পর মাস তা নিজের কাছে রাখেন।
এ কারণে ওই সময় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে করা হয়। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে পরবর্তীতে তিনি তড়িঘড়ি করে বকেয়াসহ সব পাওনা পরিশোধ করেন। ওই সময় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করায় তিনি আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে হামলার শিকার চার সাংবাদিক
এরই প্রেক্ষিতে তিনি নিজের দুর্নীতি ঢাকতে আমাদের চাকুরিচুত্য করে আত্মীয়দের ওই পদে নিয়োগ দেন। নিয়ম বর্হিভূতভাবে চাকুরিচ্যুত ও আত্মীয়দের চাকুরি দেয়ায় আমরা রোববার (৩০ জানুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার শাহানা আক্তার তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, দুই জেন্ডার প্রোমোটারের অভিযোগ সত্য নয়। আত্মীয়দের চাকুরী দেয়ার বিষয়ে তিনি সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/এমকেএইচ