নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের ত্রাস, ডাকাতি ও মাদকসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন মাসুদ ওরফে পিচ্চি মাসুদকে (৩৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের বিসমিল্লাহ নগর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পিচ্ছি মাসুদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে ২১টি মামলা রয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন রোমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে ৪টি ডাকাতির মামলা, ৩টি মাদক মামলাসহ মোট ২১টি মামলা রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
আরও পড়ুন:
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মাস কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বিবদমান দ্বন্দ্বের জের ধরে পিচ্চি মাসুদ মেয়র কাদের মির্জার সহযোগী হিসেবে তার প্রতিপক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জায়েদুল হক কচি, যুবলীগ নেতা আরমান চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহজাহান সাজু, ছাত্রলীগ নেতা করিম উদ্দিন শাকিল এবং স্থানীয় সাংবাদিক প্রশান্ত সুভাষ চন্দ্রের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে পঙ্গু করে দেয়।
পিচ্চি মাসুদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
কোম্পানীগঞ্জে গত দুই বছর যাবত পিচ্চি মাসুদ প্রকাশ্যে কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ান। ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার ছত্রছায়ায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সে। তবে পিচ্চি মাসুদ বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা ও এলাকাবাসী। এটা এলাকায় কারো অজানা নয়, বরং ওপেন সিক্রেট। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের কাছে ছিল অধরা সে।
আরও পড়ুন:
স্থানীয়দের অভিযোগ, মুছাপুর ইউনিয়নের মদিনা বাজারসহ পুরো এলাকায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে আনোয়ার হোসেন মাসুদ ওরফে পিচ্চি মাসুদ বাহিনী। সে মাদক ব্যবসার টাকা দিয়ে অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে।
গত বছরের ১০ অক্টোবর গভীর রাতে পিচ্চি মাসুদ বাহিনীর সদস্যরা আবুধাবি প্রবাসী আব্দুল করিম শিপনের (৩৫) ঘরের পাশে টয়লেটের ট্যাংকির ওপর বসে মাদক সেবন করছিল। মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় শিপনকে পরেরদিন মাগরিবের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে পিচ্চি মাসুদ বাহিনী।
আরও পড়ুন:
পিচ্চি মাসুদের নামে মামলা থাকায় কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে মুছাপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আব্দুর রহিম। পুলিশকে তথ্য দেয়ার অপরাধে পিচ্চি মাসুদ বাহিনী ১২-১৪ মাস আগে গ্রাম পুলিশ আব্দুর রহিমকে স্থানীয় মদিনা বাজারে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বেধড়ক মারধর করে হাত ভেঙে দেয়।
গত কয়েক বছর আগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মুছাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামের বাড়িতে এ পিচ্চি মাসুদের নেতৃত্বে ডাকাতি সংঘটিত হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবার তখন ভয়ে থানায় কোনো মামলা করেনি। গত বছরের ১৩ মে বিকেল ৫টার দিকে পিচ্ছি মাসুদসহ সাত থেকে আটজনের একটি দল অতর্কিতে বসুরহাট পৌরসভার করালিয়া এলাকার একটি দোকানে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা সেখানে অবস্থানরত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের (বাদল) অনুসারীদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েঁছিল। পরে ওই গুলি ছোঁড়ার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। তখন ভিডিওটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও হাতে পেয়েছে। অস্ত্রধারী ওই দুই ব্যক্তি ছিলেন আনোয়ার হোসেন ওরফে পিচ্ছি মাসুদ (৩৪)ও সহিদ উল্যাহ ওরফে কেচ্ছা রাসেল (৩৩) । গত দুই মাস আগে কেচ্ছা রাসেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ওই ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, পিচ্ছি মাসুদ গুলির পর একপর্যায়ে হাতে থাকা পিস্তল কোমরে লুকিয়ে রাখেন। তবে কেচ্ছা রাশেল গুলির পরও কিছুক্ষণ সেখানে অস্ত্র হাতে ঘোরাঘুরি করেন। দু-তিন মিনিটের ওই হামলা-গুলির ঘটনায় মিজানুর রহমানের পাঁচজন অনুসারী আহত হয়েছিলেন। পরে কোম্পানীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি গুলির কার্তুজ উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য, গত ১০মাস ধরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সহিংসতায় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির ও শ্রমিক লীগ নেতা আলাউদ্দিন নিহত হন। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী। দুই পক্ষের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মেয়র কাদের মির্জা এক পক্ষে এবং তার তিন ভাগনেসহ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল অপর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সান নিউজ/এমকেএইচ