নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত বছর সেপ্টেম্বরে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে অপসারণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযান।
দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে করা সেই শুদ্ধি অভিযান হয়ে ওঠে কেবল ক্যাসিনো কেন্দ্রীক। সেই ধারাবাহিকতায় অভিযান চালানো হয় দেশে ক্যাসিনো ব্যবসার গোড়াপত্তনকারী বলে পরিচিত দুই সহদর এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার বাড়িতে। তবে সেদিন তাদের দুজনের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমান স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হলেও অভিযানের আগেই গা ঢাকা দেন তারা।
ক্যাসিনো বিরোধী সেই অভিযানেও পড়ে ভাটা। তবে বেশ কিছুদিনের বিরতির পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত আলোচিত দুই সহদর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়াকে। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ভোরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও অর্থ জব্দের পর তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৯টি মানিলন্ডারিং আইনের মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ৯টির মধ্যে চারটি এজাহারে এই দুই জনের নাম রয়েছে। মামলার তদন্ত করে আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করি এবং সকালে কেরানীগঞ্জে তাদের এক সহযোগীর বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, সিআইডির তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সম্পত্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই দুইজনের মোট ২২টি জমি ও বাড়ি রয়েছে, যার অধিকাংশই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। এছাড়া সারাদেশে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ৯১টি অ্যাকাউন্টে তাদের মোট ১৯ কোটি টাকা জমা রয়েছে। ব্যক্তিগত পাঁচটি গাড়িও রয়েছে তাদের।
তিনি আরও বলেন, তাদের বাড়িতে অভিযানের সময় পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি সেগুলো ব্ল্যাকমানি। দেশের বাইরে পাচারের উদ্দেশ্যে তারা সেগুলো রেখেছিল। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
তাদের অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ বলেন, যখন তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয় (সেপ্টেম্বর ২০১৯) তারা সেখান থেকে পালিয়ে কক্সবাজার চলে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বোটে অবৈধভাবে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানোর। তবে সেখানে যেতে ব্যর্থ হয়ে নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। এজন্য তারা ঢাকায় এসে কেরানীগঞ্জে মোস্তফা নামের এক সহযোগীর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে বেনামি পাসপোর্ট তৈরি করে ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা। তারা বেনামি পাসপোর্ট ও ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার জন্য মোট ৪০ লাখ টাকা সঙ্গে রেখেছিল। তাদের গ্রেপ্তারের সময় ওই ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইলফোনও উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা জেনেছি এই দুইজনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ক্যাসিনো ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়। নেপালিদের মাধ্যমে তারা ক্যাসিনোর সরঞ্জাম বাংলাদেশে এনেছিল। এনামুল ওয়ান্ডারার্স ক্যাসিনো ক্লাবের পরিচালক ছিলেন।
উল্লেখ্য, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের প্রথম দিনেই গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি বহুল আলোচিত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং তিন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান), তারেকুজ্জামান রাজীব ও ময়নুল হক মঞ্জু।
গত বছর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এই দুই ভাই আলোচনায় আসেন। শুরু থেকেই তারা পলাতক ছিলেন। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ার হোল্ডার এনামুল ছিলেন গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আর তার ভাই রুপন ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।