নিজস্ব প্রতিবেদক: একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজে কালো রঙের ওয়াকি-টকি ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। তবে একটি চক্র অবৈধ উপায়ে এই কালো রঙের ওয়াকি-টকির সরঞ্জামাদি আমদানি করে ঢাকায় এনে ওয়াকি-টকি তৈরি করে তা বিক্রি করতো। আর এই ওয়াকি-টকি ব্যবহার হয় অবৈধ কাজে।
রোববার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাহফুজুর রহমান। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মেহেদী হাসান, সাদিক হাসান, মো. ফয়সাল, তালিবুর রহমান ও ফারুক হাসান।
র্যাব জানায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর সায়দাবাদ, মনিপুরীপাড়া, রাজারবাগ ও শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে ৩১৭টি অবৈধ ওয়াকি-টকি সেট ও বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদিসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এই অভিযানে অবৈধ ৩১৭ টি বিভিন্ন প্রকার ওয়াকি-টকি সেট, ১১৬টি মোবাইল ও পাঁচ হাজার ২৪৪টি বিভিন্ন প্রকার একসেসরিস জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মেহেদী হাসানের কাছ থেকে ২২৪টি ওয়াকি-টকি ওয়্যারলেস সেট, ফারুক হাসানের কাছ থেকে ৩০টি ওয়াকি-টকি ওয়্যারলেস সেট এবং পলাতক গোলাম মোহাম্মদ ফেরদৌসের বাসা থেকে ৬৩টি ওয়াকি-টকি ওয়্যারলেস সেট ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এর ধারা ৫৫(৭) অনুযায়ী ওয়াকি-টকি ব্যবহারের জন্য কোন প্রকার লাইসেন্স বা তরঙ্গ গ্রহণ করেনি। এছাড়াও একই আইনের ৫৭(৩) ধারা অনুযায়ী ওয়াকি-টকি আমদানি করার আগে বিটিআরসি থেকে অনাপত্তি গ্রহণের নিয়ম থাকলেও গ্রেফতারকৃতরা নিয়ম ভেঙে অবৈধভাবে ওয়াকিটকিগুলো আমদানি করেছে এবং বিক্রি করেছেন। গ্রেফতারকৃতরা চট্টগ্রামের কতিপয় ব্যক্তির মাধ্যমে বিদেশ থেকে দীর্ঘ এক বছর ধরে লাইসেন্স ব্যতীত ওয়াকি-টকি সেট ও সরঞ্জমাদি অবৈধ পথে সংগ্রহ করে আসছিল
তিনি আরও বলেন, আটককৃতদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তারা আনুমানিক এক হাজার ১৫০ টি ওয়াকি-টকি সেট অবৈধ কেনা-বেচা ও ইজারা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়াকি-টকি সেট ও প্রয়োজনীয় তরঙ্গ ব্যবহারের লাইসেন্স দেয়ার মাধ্যমে সরকার যে রাজস্ব আদায় করত তা থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে। মূলত সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে তারা অবৈধ উপায়ে জব্দকৃত ওয়াকি-টকি সেট ও সরঞ্জমাদি আমদানি করেছে।
অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যতিত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কালো রঙের ওয়াকি-টকি সেট ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে গ্রেপ্তারকৃতরা দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে অবৈধভাবে সাধারন মানুষের কাছে কালো রঙের ওয়াকি-টকি সেট বিক্রি করেছে যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। এই ধরণের অবৈধ ওয়াকি-টকি সেট ব্যবহার করে অপরাধী চক্র ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ করে থাকে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ধরণের অবৈধ ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধী চক্র ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ বহুবিধ অপরাধ করে থাকে। বিভিন্ন সময় ভূয়া র্যাব কিংবা পুলিশ সদস্য আটকের পর এই ধরনের ওয়াকিটকি সেট জব্দ করার ঘটনায় ঘটছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিটিআরসি’র উপ-পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট ও ইন্সপেকশন) এসএম গোলাম সারওয়ার বলেন, বিটিআরসি’র অনুমোদন ছাড়াও অবৈধভাবে তরঙ্গ ব্যবহার করা সম্ভব। তবে বিটিআরসি নিয়মিত অভিযান ও মনিটরিং করে থাকে। যারা অবৈধভাবে তরঙ্গ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কালো ওয়ারলেস সেট ব্যবহার সাধারণদের সুযোগ নেই। তারপরও বিভিন্ন জায়গায় এই ধরণের ব্যবহারের অভিযোগ পাই। এইক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিটিআরসি কাজ করছে। ঢাকা ছাড়াও দেশের ৫টি স্থানে আমাদের মনিটরিং স্টেশন আছে। বিভিন্ন গার্মেন্টস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, বিনোদন কেন্দ্র, হোটেল কর্তৃপক্ষ ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে থাকেন। আমরা ওয়াকিটকি’র অবৈধ ব্যবহার বন্ধে সচেতনতার জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
সাননিউজ/ জেআই