নিজস্ব প্রতিবেদক: মুদি ও চা দোকানি থেকে নারী পাচার করে কোটিপতিতে পরিণত হয়েছে একটি চক্র। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বুধবার (১৩ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব-৪) এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, মুদি দোকানদার থেকে হঠাৎ করেই বনে গেলেন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন এক চা দোকানিকে। এ চক্রের অপকর্মে সঙ্গ দিয়েছে বৈধ কিছু এজেন্সিও। চক্রের মূল হোতা টুটুলসহ গ্রেফতারকৃতরা হলো, গোপালগঞ্জের শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন (৩৮), মেহেরপুরের মো. মারুফ হাসান (৩৭), জাহাঙ্গীর আলম (৩৮) ও লালটু ইসলাম (২৮), শরীয়তপুরের আলামিন হোসাইন (৩০), কুষ্টিয়ার আব্দুল্লাহ আল মামুন (৫৪)।
রংপুরের আসমাও ভেবেছিলো দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিলেই বদলে যাবে জীবন। আর তাই তো দালালরূপী তৈয়বের ফাঁদে পা দিয়ে চলে যায় জর্ডান। সেখানে পৌঁছে একবার মাত্র যোগাযোগ হয় পরিবারের সঙ্গে। তারপর থেকেই নিখোঁজ হন তিনি।
আসমার চাচা বলেন, তৈয়বকে বার বার বলা হয়েছে ভাই আসমার সঙ্গে আমাদের একটু কথা বলিয়ে দেন, যোগাযোগ করিয়ে দেন। তৈয়ব কোনো কর্ণপাত করেননি।
শুধু এই একটি মানবপাচারকারী চক্রের হাতে প্রতারিত ভুক্তভোগীর সংখ্যা শতাধিক। কেউ আবার সর্বস্ব বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা দিয়ে চার বছর ধরে অপেক্ষা করছেন দেশ ছাড়তে।
ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, তৈয়বের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আজ চার বছর চলে আমি তাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি।
অথচ এ চক্রের মূল হোতা টুটুল মুদি দোকানদার, আর তার সঙ্গী তৈয়ব চা দোকানি। গত ৫ বছরে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
র্যাব-৪ এর সিও মোজাম্মেল হক বলেন, বিদেশে যারা নারী পাচার করে বা মানবপাচার করে তাদের সঙ্গে সক্ষতা গড়ে উঠে। অন্য আরেক সহকারী তৈয়ব আলী চা দোকানদার ছিলো। এই প্রতারকদের প্রতারণ ছিলো অভিনব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব বলছে, মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠাতে নারীদেরকেই টার্গেট করতো চক্রটি। গন্তব্যে পৌঁছানোর পরই কেড়ে নেওয়া হতো পাসপোর্ট, মোবাইল। এরপর করা হতো জিম্মি, পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো আরও অর্থ। আর এই অপকর্মে তাদের সহযোগিতা করতো অনুমোদিত কিছু রিক্রুটিং এজেন্সিও।
মোজাম্মেল হক বলেন, অনুমোদিত যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি আছে তাদের মাধ্যমেই তারা এ নারীদের পাঠিয়ে থাকে। বিদেশে যাওয়ার পর পরই বিমানবন্দর থেকেই তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। ফলে তারা খুব অসহায়ত্ব বোধ করত এবং তাদের বিক্রি করে দেওয়ার পরে তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত না। তখন টুটুল উল্টো তাদের অভিভাবকদের চাপ প্রয়োগ করত। বলত, আরও দুইলাখ টাকা না দিলে সে বাংলাদেশে আসতে পারবে না, পাসপোর্ট পাবে না আবার বেতন ও পাবে না।
প্রভাবশালী কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এর আগে সকালে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান জানান, রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা টুটুল ও তার সহযোগীসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়।
সান নিউজ/এফএআর