নিজস্ব প্রতিবেদক: অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে আসেন মুসা বিন শমসের, তার স্ত্রী ও ছেলে জুবি মুসা। ডিএমপির গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার আবদুল কাদেরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার আবদুল কাদের নামে একজনের বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার আবদুল কাদেরের সঙ্গে সংশ্নিষ্টতার অভিযোগে মুসা বিন শমসেরকে কাছে তিন বিষয়ে স্পষ্ট হতে চায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বিষয় তিনটি হলো- কেন দশম শ্রেণি পাস কাদেরকে মুসা তার আইন উপদেষ্টা নিয়োগ দিলেন, কেন এই প্রতারককে ২০ কোটি টাকার চেক দিলেন ও এ ঘটনা সত্যি কিনা এবং কাদেরের সঙ্গে মুসার আর কী ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। এরই মধ্যে কাদেরের ব্যাপারে জানতে মুসাকে ডিবিতে ডাকা হয়েছে।
এর আগে রোববার মুসার ছেলে আইনজীবী জুবি মুসা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, কাদেরের ঘটনায় তার বাবা 'ভিকটিম', নাকি এই চক্রের সঙ্গে সন্দেহভাজনভাবে জড়িত।
এ ব্যাপারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, কাদেরের প্রতারণা ও মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে তার কী ধরনের সম্পর্ক- এটি জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মুসার ছেলে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এ ঘটনায় তার বাবার ভূমিকার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে চান।
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার আবদুল কাদের ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের আইন উপদেষ্টা দাবি করতেন। কাদেরের কাছে মুসা বিন শমসেরের প্রতিষ্ঠানের চুক্তিপত্রসহ বিভিন্ন নথি পাওয়া গেছে। যে কারণে মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা। তবে রোববার তার ছেলে জুবি শমসের ডিবিতে আসেন। কাদেরের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে ৭ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসা থেকে কাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি। এ সময় কাদেরের দ্বিতীয় স্ত্রী ও সততা প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, অফিস ম্যানেজার শহিদুল আলম ও অফিস সহায়ক আনিসুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। কাদেরের কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে ডিবি। একসময়ের মাছ বিক্রেতা কাদের এখন প্রাডো গাড়িতে অস্ত্র ও ওয়াকিটকি নিয়ে চলাফেরা করেন।
মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে কাদের ছবি তুলে চাকরিপ্রার্থী, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করতেন। তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন তার আইন উপদেষ্টা বলে। তার বেশ কিছু ভুঁইফোড় কোম্পানিও রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা ট্রেড করপোরেশন, জমিদার ট্রেডিং, সামীন এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী গ্রুপ, হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশন, সততা প্রপার্টিজ, ডানা লজিস্টিকস ও ডানা মোটরস। কাদের বড় ধরনের প্রতারণা করেন হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশনের 'একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের' মাধ্যমে।
২০০৪-০৬ সালে দেশের শত শত মানুষের কাছ থেকে সরকারি অনুদানে বাড়ি ও খামার তৈরি করার নামে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। কাদের ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পল্লবী ও তেজগাঁও ছাড়া আরও একাধিক থানায় অর্ধডজন মামলা রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০ কোটি বা তার বেশি টাকার লোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও প্রতারণা করতেন তিনি।
সান নিউজ/এফএআর