নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার সাভারের বক্তারপুরে পোশাক বানিয়ে ফেরি করে বিক্রি করা পারুল বেগম খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে একটি অডিও ক্লিপ শোনান। ওই ক্লিপে বলতে শোনা যায়, ‘বিল্লাল যদি গ্রেফতার না হয়, প্রথমে একজন রিকশাওয়ালা মারব, তাতেও না হলে আরেকজন মহিলা মারব।’
পিবিআই প্রধান জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কাউন্সিলর প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর মো. হালিম হাওলাদার এই হত্যার ছক কষেন। প্রতিপক্ষ বিল্লাল সরদারকে খুনের মামলায় ফাঁসাতে পারলে সহজেই জিতবেন, এই ছিল তার ভাবনা।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হালিম হাওলাদার ৩০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন পিরোজপুরের জামাল হাওলাদারের সঙ্গে। জামাল আবার জোট বাঁধেন দরজি মাস্টার মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজের সঙ্গে। খুনের জন্য তাদের পছন্দ ছিল এমন কেউ, যার মৃত্যুতে কোনো চাঞ্চল্য হবে না বা কেউ তদবির করবে না।
পিবিআই প্রধান জানান, পারুল বেগমের গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীতে। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। শিশুদের পোশাক হাতে সেলাই করে বিক্রি করতেন। কাজের সূত্রেই পরিচয় দরজি মাস্টার মো. মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজের সঙ্গে। মিলন কবিরাজ সেলাইয়ের পাশাপাশি তুকতাক করেন। হাজারো মানুষের সঙ্গে তার পরিচয়। একজন ‘নির্ভেজাল’ মানুষকে খুনের নিশানা করতে পিরোজপুরের জামাল হাওলাদার তাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
পারুলের সঙ্গে জামালের পরিচয় হয়। তারা পরস্পরকে বিয়ে করবেন সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী সাভারের বক্তারপুরের একটি টিনশেড বাসায় ওঠেন ৭ সেপ্টেম্বর। রাত আটটার দিকে খাওয়াদাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। অনেক বেলা হয়ে গেলেও কেউ উঠছেন না দেখে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ডাকাডাকি করেন। বাসার পেছনে গিয়ে তিনি দেখেন গ্রিলের জানালা ওঠানো। ভেতরে পারুলের লাশ পড়ে আছে। পাশে একটা ফোন ও বিল্লাল সরদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি অনুলিপি পড়ে ছিল। তবে জামাল হাওলাদার উধাও।
এই হত্যাকাণ্ডের পর পারুলের ভাই মমিনুল হক ওরফে মোহন অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন। থানা ১১ দিন ওই মামলার তদন্ত করে। পরে পিবিআই ঢাকা জেলা নিজ উদ্যোগে তদন্ত শুরু করে। পরে পিবিআই দূর থেকে বিল্লাল সরদারকে অনুসরণ করেছিল। এক সময় তারা নিশ্চিত হয়ে যায় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিল্লালের সম্পৃক্ততা নেই। পরে তারা তার (বিল্লাল) সঙ্গে কথা বলে।
বিল্লাল জানায়, তিনি নির্বাচন করছেন, সে কারণে তাকে ফাঁসাতে কেউ এমন কিছু করে থাকতে পারে। বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম দেন তিনি। অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর তারা আসামিদের শনাক্ত করে। নিশ্চিত হওয়ার পরও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হালিম হাওলাদারকে গ্রেফতার করেনি পিবিআই। তারা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। নির্বাচনে বিল্লাল ও হালিম দুজনই হেরেছেন।
পরে পিবিআই ২২ সেপ্টেম্বর মো. জামাল হাওলাদারকে ঢাকার লালবাগ থেকে, পরদিন মিলন কবিরাজকে দারুস সালামের লালকুঠি মাজার রোড থেকে ও ২৬ সেপ্টেম্বর ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী হালিম হাওলাদারকে মোংলা থেকে গ্রেফতার করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সান নিউজ/এমকেএইচ