নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল ও তার ইভালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় মোহাম্মদপুরে তাদের বাসার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকরা পাওনা টাকা আদায়ে রাসেলের বাসার সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে রাসেলের মোহাম্মদপুরের নিলয় কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংয়ের বাসায় (হাউজ ৫/৫এ, স্যার সৈয়দ রোড) অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানের পর রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিকালে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।
গ্রাহকদের দাবি, তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ অথবা আমাদের পণ্য ফেরত দেয়া হোক। গ্রাহক নজ্রুল ইসলাম বলেন, আমি নিজে কিছু টাকা জমিয়ে আর বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মে মাসে একটি মোটরসাইকেল অর্ডার করি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে। যেকোনোভাবে পণ্য কিংবা টাকা ফেরত চাই।
মনিরুল ইসলাম সবুজ নামের আরেক গ্রাহক বলেন, 'আমাদের মতো ক্ষুদ্র গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া হোক। আমরা সর্বস্ব দিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে এখানে বিনিয়োগ করেছি। তাই অনুরোধ আমাদের পণ্য বা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।'
এর আগে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে গুলশান থানায় ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের (প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক অনিন্দ তালুকদার। তিনি বলেন, আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার নম্বর- ১৯।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৯ মে থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ইভ্যালির পণ্যের মূল্য বাবদ ৩ লাখ ১০ হাজার ৫৯৭ টাকা অনলাইন ব্যাংকিং ও একটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করেন গ্রাহক আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা। পণ্য ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে দিতে ব্যর্থ হলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরতের অঙ্গীকার করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। সবশেষ ৫ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির গ্রাহকসেবা শাখায় (কাস্টম কেয়ার সেন্টার) যোগাযোগ করে পণ্য পেতে ব্যর্থ হন আরিফ।
মামলার বাদী আরিফ বাকের তার অভিযোগে বলেন, ইভ্যালির কাছে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকার পণ্যের অর্ডার দেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে তাকে কোনো পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। পরে গত ৯ সেপ্টেম্বর দুই বন্ধুকে নিয়ে আরিফ ধানমন্ডির ১৪ নম্বর রোডে ইভ্যালির অফিসে যান। কিন্তু ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাননি। একপর্যায়ে অফিসের ভেতর থেকে রাসেল তাদের টাকা দিতে অস্বীকার করেন ও তাদের ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দেন। এর আগে যতবার যোগাযোগ করা হয়, ততবারই ইভ্যালি টাকা ফেরত দেব-দিচ্ছি বলে টালবাহানা করে বলে অভিযোগ গ্রাহক আরিফ বাকেরের।
ইভ্যালিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রাসেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদেও আছেন।
এদিকে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, গত মঙ্গলবার ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে মাত্র আড়াই বছরের মাথায় সরবরাহকারী কোম্পানি ও গ্রাহকদের কাছে ৫৪৩ কোটি টাকার দায়ে পড়েছে ইভ্যালি। এত অল্প সময়ে এই বিপুল টাকা কোথায় গেল, তার হদিস এখনও মেলেনি।
আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত জুলাই মাসে দুদকের আবেদনে ইভ্যালির শীর্ষ কর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
সান নিউজ/এমএইচ