নিজস্ব প্রতিবেদক: কালা-নাগিন চক্রের হাতেই দুই শতাধিক তরুণীকে পাচার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)। এক থেকে দেড় লাখ টাকায় একেক তরুণীকে পার্শ্ববর্তী দেশের দালালের কাছে বিক্রি করত চক্রটি।
আলোচিত চক্রটির মূলহোতাসহ তিন সদস্যকে আটকের পর সোমবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্সটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
আটকরা হলেন, মো. কালু ওরফে কাল্লু (৪০), মো. সোহাগ ওরফে নাগিন সোহাগ (৩২) ও মো. বিল্লাল হোসেন (৪১)। রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর পল্লবী এবং মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে তাদের আটক করে র্যাব-৪।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ থেকে জানা যায়, এক মা তার মেয়েকে পাচারকারীর হাত থেকে উদ্ধারে নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝুঁকি নিয়ে ভারতে যান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়ার একটি নিষিদ্ধ পল্লী থেকে তার মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশে ফেরার পথে সীমান্তে বিএসএফ তাদের আটক করে। সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনা দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কার্যকরী উদ্যোগ নেয় র্যাব। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে কাল্লু-সোহাগ চক্রের হোতাসহ তিনজনকে আটক করে র্যাব-৪।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চক্রটি ফাঁদে ফেলে এবং প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে নারী ও তরুণীদেরকে পাচার করত। এ ক্ষেত্রে তাদের মূল টার্গেট ছিল দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণীরা। তাদের প্রলোভন দেখিয়ে যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী দেশে বিক্রি করে দিত। দেশে চক্রটির ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে।
তিনি বলেন, চক্রটি প্রথমে ভুক্তভোগীদের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন সেইফ হাউজে রাখত। পরে সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে জলপথে নৌকাযোগে তাদের সাতক্ষীরা সীমান্ত পার করা হতো। স্থলপথে পাচারের ক্ষেত্রে অরক্ষিত অঞ্চল ব্যবহার করত চক্রটি।
তিনি আরও বলেন, পাচার হওয়ার পর পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকদিন ভুক্তভোগীদের রাখা হতো। পরে সুবিধাজনক সময়ে সড়কপথে তাদের চাহিদামতো বিভিন্ন স্থানে পাঠানো এবং বিক্রি করা হতো। গ্রেফতার মো. কাল্লু রাজধানীর পল্লবী এলাকার চিহ্নিত মানব পাচারকারী ও সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তিনি ৮ থেকে ১০ বছর ধরে মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত। পার্শ্ববর্তী দেশের এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাতক্ষীরার বিল্লালসহ সীমান্তবর্তী আরও কয়েকজন সহযোগীর মাধ্যমে তিনি নারী পাচার করে আসছিলেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন বলেন, এ পর্যন্ত চক্রটি প্রায় দুই শতাধিক তরুণীকে পাচার করেছে। আটক কাল্লু জানান, জনপ্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকায় প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে পার্শ্ববর্তী দেশের দালালের কাছে বিক্রি করা হতো।
তিনি বলেন, আটক নাগিন সোহাগ গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। সম্পর্কে কাল্লু ও নাগিন সোহাগ মামা-ভাগ্নে। গ্রেফতার সোহাগ তার মামা কাল্লুর মাধ্যমে এ কাজে যুক্ত হন। তার মূল কাজ হলো, চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে ঢাকার দরিদ্র ও অল্পবয়সী তরুণীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ায় প্রলুব্ধ করা। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সান নিউজ/এফএআর