নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই দফা রিমান্ড শেষে আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনিকে শনিবার (১৫ আগস্ট) আদালতে হাজির করা হয়। আদালত পরীমনিকে নতুন করে রিমান্ড বা জামিন কোনোটিই দেননি। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় তার মুক্তির পথ কী হতে পারে, তা জানালেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবী।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলেন, আবারও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেই চিত্রনায়িকা পরীমনি জামিন আবেদন করতে পারবেন। মহানগর দায়রা জজ
আদালতেও জামিন চাওয়া যাবে। এখান থেকে জামিন না পেলে যেতে হবে হাইকোর্টে। হাইকোর্টও যদি জামিন না দেন, তবে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগেও যেতে পারবেন নায়িকা।
এ বিষয়ে পরীমনির আইনজীবীরা বলেন, জামিন দেওয়ার ক্ষমতা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের রয়েছে। তাই আমরা আবারও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেই জামিনের আবেদন করবো। তবে আমরা ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবো।
শনিবার শুনানির শুরুতে আইনজীবীরা এজলাসে পরীমনির উপস্থিতিতে শুনানি করার আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তাদের এ আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান আদালতকে বলেন, পরীমনি তো মার্ডার মামলার আসামি নন। তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলারও আসামি নন। যেকোন শর্তে তাকে জামিন দেওয়া হোক। আদালত প্রয়োজনে তার পাসপোর্ট জমা রেখে জামিনের আদেশ দিতে পারেন।
কাশিমপুর জেলে পরীমনি, পাবে ডিভিশন
আদালতের নির্দেশে গাজীপুরের কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে রয়েছেন আলোচিত নায়িকা পরীমনি। সেখানে তাকে কারাবিধি মোতাবেক ডিভিশন দেওয়া হবে।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে পরীমনিকে বহনকারী প্রিজনভ্যানটি কাশিমপুর কারাগারে ঢোকে। এর আগে রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় পরীমনির জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
কাশিমপুর কারাগার-২ এর জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল জলিল এতথ্য নিশ্চিত করেন।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকার মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডল এ আদেশ দেন।
পরীমনির অন্যতম আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভীর এক আবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাকে ডিভিশন দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী বিষয়টি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
ডিভিশন দেয়ার আদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু আসামি একজন চিত্রনায়িকা ও শিল্পী, সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে বসবাস করা তার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ কারণে কারাবিধি মেনে কারা কর্তৃপক্ষকে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেয়া হলো।
পরীর আইনজীবী নীলাঞ্জনা তার আবেদনে বলেন, যেহেতু নায়িকা পরীমনি একজন স্বনামধন্য নায়িকা, তার জন্য সাধারণ হাজতিদের সঙ্গে বসবাস করা অস্বস্তিকর ও তার মানসিক পীড়ন হতে পারে। এমন কি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। এ কারণে তাকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার আবেদন করছি।
আবেদনে তিনি বলেন, পরীমনির জীবন-যাপন, পোশাক পরিচ্ছদ ও অনেক বিষয় অন্যদের থেকে আলাদা। এ কারণে তাকে কারাগারে ডিভিশন দেয়া জরুরি।
দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার দুপুরের আগে পরীমনিকে আদালতে নেয়া হয়। বেলা ২টা ৩৮ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। সোয়া ৩টার পর রায় আসে। এদিন পরীমনিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তা।
অন্যদিকে পরীমনির পক্ষের আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী, মজিবুর রহমানসহ আরও কয়েকজন জামিন চেয়ে শুনানি করেন।
শুনানিতে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আসামির সামাজিক মানমর্যাদা রক্ষা এবং একজন শিল্পী হিসেবে মানসিক উৎপীড়ন থেকে রক্ষার মানবিক তাগিদেই তাকে জামিনে মুক্ত করা আবশ্যক।
পরীমনির মুক্তির দাবিতে সমাজের মুক্তচিন্তার প্রগতিশীলরা সোচ্চার হচ্ছেন। বিজ্ঞ আদালত নিশ্চয়ই পত্রপত্রিকা খুললে প্রতিদিন দেখেন এসব সংবাদ ছাপা হচ্ছে, টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে। দেশের বিশিষ্টজনেরা তার মুক্তি দাবি করছেন।
সে যদি এই মামলায় অপরাধী হয়, তাহলে তাকে মামলার বিচারের মধ্য দিয়ে শাস্তি দেয়া যাবে। কিন্তু আপাতত যেকোনো শর্তে তার জামিন চাই বিজ্ঞ আদালতে।
আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে ২০ বোতল মদ পাওয়া গেছে। মামলার বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন যে, তদন্ত করে সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে। এটা একটি অনিশ্চিত বিষয়।
তিনি পরীমনির হয়ে বলেন, আমার (পরীমনি) পাসপোর্ট রেখে জামিন দেয়া হোক। কারণ আইও বলেছেন, তার আবেদনে আসামি পালিয়ে যেতে পারে। আমার পাসপোর্ট জমা রাখলে আমি তো বিদেশে যেতে পারব না। বিশ্বময় অতিমারি সমস্যা চলছে। এর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তার এই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকার যেভাবে বলবে সেভাবে তদন্ত করার কথা, সেটা হলো আর্মস গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। র্যাব আইনগতভাবে অপারেশন করেন নাই। তারা আসামিকে গ্রেফতার করে উত্তরাতে তাদের অফিসে নিয়ে গেছে। তাকে থানায় হস্তান্তর না করে নিজেদের কাছে কয়েক ঘণ্টা রাখার পর তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পরীমনির আইনজীবী তার হয়ে আরও বলেন, আমি কোনো খুনের আসামি নই, আমাকে কেন এত ঘণ্টা আটক রাখা হলো আপনি নিশ্চয়ই তা বিবেচনা করবেন; অবজারভেশন করবেন, জামিন দেবেন।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু আদালতকে বলেন, আসামির বাসা থেকে প্রচুর দেশি-বিদেশি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নায়িকার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দেশের অনেক শিল্পপতি, কোটিপতি ও সম্ভ্রান্ত ঘরের লোকদের ও তরুণ সমাজকে ডিজে পার্টির মাধ্যমে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই মামলার তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করছি।
তার কাছে এলএসডি পাওয়া গেছে। আর বাসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আধা ঘণ্টা পর দরজা খুলেছেন। সেই সময়ের মধ্যে তিনি মদগুলো ঢেলে ফেলে দিয়েছেন।
উল্লিখিত বক্তব্য দিয়ে আব্দুল্লাহ আবু জামিনের বিরোধিতা করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক পরীমনির জামিন নাকচ করেন।
৪ আগস্ট চিত্রনায়িকা পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই অভিযানে তার বাসা থেকে বিপুল মাদকদ্রব্য উদ্ধারের কথা জানায় বাহিনীটি।
মাদক উদ্ধারের ঘটনায় ৫ আগস্ট পরীমনির নামে বনানী থানায় মামলা হয়। সে মামলায় প্রথম দফায় তাকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নায়িকাকে ফের দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন বিচারক।
দুই দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার পরীমনিকে আদালতে তোলা হয়।
সাননিউজ/এফএআর/এমআর