নিজস্ব প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার ধামশ্বর ইউনিয়নে আফরোজা আক্তার স্মৃতি পাঠাগারের ওয়াকফকৃত জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। জায়গাটি নিয়ে মামলা চলায় দৌলতপুর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ার আগেই বিবাদীরা আবারও জায়গা দখল করে নেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধামশ্বর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বিলপৌলী গ্রামে একটি পাঠাগার স্থাপন করেন স্থানীয় যুবক রবিউল আলম। এলাকাবাসীকে পাঠাগারের মাধ্যমে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে এগিয়ে নেয়াই ছিল তার অন্যতম উদ্দেশ্য। পাঠাগারের উদ্যোগে স্থানীয়দের নিয়ে করেছেন সামাজিক অনেক আয়োজন ও অনুষ্ঠান। ধীরে ধীরে স্থানীয়রা সম্পৃক্ত হতে থাকে পাঠাগারের সাথে। স্থানীয়ভাবে ভালোই সাড়া ফেলেছে তার পাঠাগারটি। শুরুতেই ভাড়া জায়গায় পাঠাগারটি পরিচালিত হলেও বিলপৌলী গ্রামের ছালমা আক্তার নামে এক বিধবা নারী এগিয়ে আসেন পাঠাগারের পাশে।
তিনি পাঠাগারের নামে ২০১৫ সালেই ২২ শতাংশ সম্পত্তি ওয়াকফ প্রশাসক কার্যালয়ে তালিকাভূক্ত করার মাধ্যমে নি:শর্তভাবে দান করেন। ওয়াকফ ই.সি. নং- ২২১৯৮ এবং দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেজি নং-১৫৭৬। পাঠাগারের নামে সম্পত্তি ওয়াকফ দলিলে সনাক্তকারী ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা জানে আলম। পাঠাগারের পক্ষ থেকে সরকারি ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের বিষয়টি ১৯ আগস্ট ২০২০; চিঠির মাধ্যমে ওয়াকফ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। ওয়াকফ স্টেট চিঠিটি পেয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসককে ১২ নভেম্বর ২০২০; ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি পাঠান। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসককের নির্দেশে ইউএনও এসিল্যান্ডকে নিয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উভয়পক্ষকে ২৩ মে ২০২১ তারিখে ইউএনও অফিসে উপস্থিত থাকার আদেশ দিয়ে নোটিশ জারি করেন।
পাঠাগার কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে উপস্থিত হয়ে তাদের বক্তব্য ও প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে পারলেও বিবাদীগণ এখন পর্যন্ত আসেননি। এরই মধ্যে উক্ত জমিতে একতলার দোকানঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করেছে দখলকারীরা।
অভিযোগকারী বাদী রবিউল আলম বলেন, পাঠাগারের মাধ্যমে স্থানীয় বিলপৌলী গ্রামের মানুষ বিভিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ও সোচ্চার হচ্ছে প্রভাবশালীদের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে। ফলে প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি ও চাপ আসতে থাকে আমার উপর। কোন কিছুতেই যখন পিছু হটেনি, তখন ২০১৯ সালে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দেয়া আব্দুল হালিম ও জানে আলম ও ওয়াকফ দলিলে সনাক্তকারী স্থানীয় বাসিন্দা জানে আলম রাতের অন্ধকারে আফরোজা আক্তার স্মৃতি পাঠাগারের জায়গা দখল করে একতলা দোকানঘর নির্মাণ করেন। পাঠাগারটি সরিয়ে না নিলে দেখে নেয়ারও হুমকি দেন আমাকে। পাঠাগারের জায়গা দখলের প্রতিবাদে পাঠক ও এলাকাবাসী জড়ো হয়ে মানবন্ধন ও মিছিল করে দখলকারীদের বিরুদ্ধে। তখন কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দিলেও পাঠাগারের জায়গায় বর্তমানে একতলা দোকানঘর নির্মাণ করেছে দখলকারীরা।
তিনি আরও জানান, পাঠাগারের নামে দান করা সরকারি ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের অভিযোগে দৌলতপুর থানায় ২০২০ সালের ৮ আগস্ট জিডি করা হয় (জিডি নং: ৬৬৬, তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম মো: গোলাম মেহেদী)। অভিযোগের পরে গত বছরের ২১শে আগস্ট পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায় এবং জবর দখলকারীদের নির্মাণ কার্যক্রম স্থগিত করার মৌখিক আদেশ দেন। কিন্তু ঘটনার ১ বছর চলে গেলেও তদন্তের প্রতিবেদন জানতে পারেনি।
এ বিষয়ে বিবাদী আব্দুল বলেন, জায়গার বিষয়টি পারিবারিক। নতুন করে দোকানঘর নির্মাণের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. রেজাউল করিম বলেন, আইনগতভাবে রবিউলকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে দৌলতপুর সহকারি ভূমি কমিশনার মুহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/এফএআর