নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের পদ হারানো হেলেনা জাহাঙ্গীর, চিত্রনায়িকা পরীমনি, মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ, মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ এবং তাদের কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সপ্তাহখানেকে মধ্যে একইভাবে প্রত্যেকের বাসায় অভিযান চালানো হয়।
অভিযান পরিচালনা করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, গ্রেপ্তার প্রত্যেকের বাসা থেকেই জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ মাদক। তবে প্রত্যেক আসামির আইনজীবী আদালতে দাবি করেছেন, বাসা থেকে মাদক পাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে প্রত্যেক আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। চিত্রনায়িকা পরীমনিসহ অন্য আসামিরা পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, মাদকসহ কোন ব্যক্তি হাতেনাতে গ্রেপ্তার হলে সেই মামলা ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এই আইনের ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে, মাদক ব্যবসা করে কোন ব্যক্তি অবৈধ সম্পদ অর্জন করলে আসামির ব্যাংক হিসাব বা আয়কর বিবরণী বা সম্পদের কর–সম্পর্কিত যাবতীয় রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই প্রয়োজন মনে করলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবেন তদন্ত কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট আসামির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (নিষ্ক্রিয়করণ) বা সম্পদ যাচাইয়ের জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চাইতে পারবেন তিনি।
পরীমনি
পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার বাদী র্যাব কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান। মামলায় মজিবর অভিযোগ করেছেন, ৪ আগস্ট তিনিসহ র্যাব-১–এর সদস্যরা গুলশান-১ এ অবস্থান করছিলেন। গোপন সংবাদে জানতে পারেন, পরীমনি সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দিপুর মাধ্যমে বিদেশি মদ সংগ্রহ করে বনানীর বাসায় মজুত করেছেন। তারা এখন বাসায় অবস্থান করছেন। পরে বাসার পঞ্চম তলায় অভিযান চালিয়ে পরীমনির শয়নকক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। পরীমনির দেখানো শয়নকক্ষের একটি কাঠের ফ্রেমের ভেতর থেকে বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। এ ছাড়া শয়নকক্ষ থেকে একটি সাদা জিপারে রাখা চার গ্রাম আইস বা ক্রিস্টালমেথ জব্দ করা হয়। আরও জব্দ করা হয় এক ব্লট এলএসডি মাদক। চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসা থেকে বিদেশি মদসহ অন্য মাদকের মোট মূল্য দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার টাকা।
মামলায় বলা হয়, পরীমনি এসব মদ কবির নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করে বাসায় রাখতেন। মামলায় কবিরের পূর্ণাঙ্গ নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। একই মামলায় আবার র্যাব দাবি করেছে, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের কাছ থেকে মদ সংগ্রহ করতেন। তবে পরীমনি ও আশরাফুল ইসলামের আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেছেন, র্যাব বাসায় মদ পাওয়ার অভিযোগে যে মামলা করেছে, তা সঠিক নয়।
পরীমনির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হলে তার সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা
মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারার বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। তার ভাড়া বাসার উত্তর-পূর্ব কোনায় চারটি হুক্কা, একটি শপিং ব্যাগের ভেতর ইয়াবা দেখতে পান। আর রান্নাঘর থেকে আট বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। ফারিয়া মাহাবুব জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, এই অবৈধ কাজে তার সহযোগী দুই থেকে তিনজন। তার বিরুদ্ধে করা পৃথক ৩টি মাদক মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে কারাদণ্ড হতে পারে ১৫ বছর।
মরিয়ম আক্তার মৌ
মরিয়ম আক্তার মৌয়ের বিরুদ্ধে করা মাদক আইনে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১ আগস্ট মোহাম্মদপুরের বাবর রোড এলাকার একটি বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার শয়নকক্ষে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে ৭৫০ পিস ইয়াবা, ১২ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৫ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
হেলেনা জাহাঙ্গীর
গত ২৯ জুলাই রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। তার বিরুদ্ধে মাদ আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বন্য প্রাণী নিয়ন্ত্রণ আইন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন এবং প্রতারণার অভিযোগে ৬টি মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া কথিত ব্যবসায়ী শরফুল হাসান ওরফে মিশুর বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে ৩টি মামলা হয়েছে। মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের বিরুদ্ধেও মাদক, বিশেষ ক্ষমতা, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।
সাননিউজ/এমআর