নিজস্ব প্রতিবেদক: ঠাকুরগাঁও আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে সরকারি বরাদ্দের বিপরীতে করোনার রোগীদের কম দামে খাবার সরবরাহের সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে আদালতে তোলা হয়েছে। সেখানে তাকে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার আইও ডালিম কুমার রায়। শনিবার (১০ জুলাই) রাত ৮টায় গ্রেফতার হওয়া তানু জাগোনিউজ২৪কমের জেলা প্রতিনিধি।
রোববার (১১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিক তানুকে ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ডালিম কুমার রায় সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুর ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ডালিম কুমার রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাংবাদিক তানুর ভাই মাহাবুর আলম সোহাগ জানান, আজ বিকাল ৩টায় ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালতে তাকে তোলা হয়েছে। সেখানে তাকে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়েছে মামলার আইও ডালিম কুমার রায়।
তিনি বলেন, আদালতে শুনানি চলছে। এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
কোর্ট চত্বরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তানুর মা রানী আখতার বলেন, আমার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি। সে সৎপথে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছে। একটি সত্য সংবাদ প্রকাশ করে যদি আমার ছেলেকে জেলে যেতে হয় এর থেকে বড় কষ্ট নেই। আপনারা সকলে আমার ছেলেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করে দিন। সারাদেশের সাংবাদিকের কাছে আমার দাবি আমার ছেলের জন্য কিছু করুন।
শনিবার তানুকে গ্রেফতারের পর থানা হাজতে রাখলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আজ তাকে আদালাতে তোলা হলো।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে বরাদ্দের বিপরীতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের কম টাকার খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে এমন সংবাদ প্রকাশের জেরে তিন সাংবাদিক জাগোনিউজ২৪.কমের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটু ও নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি রহিম শুভর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল আজিজ। ওই মামলায় এরই মধ্যে তানুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঠাকুরগাঁও সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(১)(ক) ২৫(১)(খ) ২৯(১)/৩১(১)/৩৫(১) ধারায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল আজিজ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার ওই এজাহারে জাগো নিউজে গত ৫ জুলাই প্রকাশিত ‘দিনে বরাদ্দ ৩০০ হলেও করোনা রোগীদের খাবার দেয়া হচ্ছে ৭০ টাকার!’ শিরোনামের সংবাদের খাবার সরবরাহে অনিয়মের সত্যতা উঠে এসেছে।
মামলার এজাহারে বাদী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক উল্লেখ করেছেন, ‘গত জুন মাসে ২/১ দিন খাবার সরবরাহে সামান্য ব্যত্যয় ঘটলেও অন্যান্য সময় সরকারি বরাদ্দ মোতাবেক যথাযথভাবে রোগীদের খাবার প্রদান করা হচ্ছে।’
তত্ত্বাবধায়কের দাবি জাগো নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরই তিনি হাসপাতালে খাবার সরবরাহে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, হাসপাতালের পাচক (বাবুর্চি) ও রোগীদের খাবার পরিবেশনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য জানতে পেরেছেন।
এদিকে, এজাহারে ‘দু-একদিন খাবার সরবরাহে ব্যত্যয়’ ঘটার তথ্য অকপটে স্বীকার করা হলেও তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘ভাবমূর্তি বিনষ্ট’ এবং ‘সুনাম ক্ষুণ্ন’ হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দাবি-খাবার পরিবেশনে অনিয়মের ওই সংবাদে ‘জনরোষ সৃষ্টিকারী’ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
তানু থানা হাজতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেখান থেকে তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। শনিবার (১০ জুলাই) দিনগত রাত ১টার দিকে তানুর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে পাঠান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম।
তানুর স্বজনরা জানান, করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি এ রোগ থেকে সুস্থ হন তানু। তবে এখনো তিনি শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করছেন। তাকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে।
এদিকে তানুকে গ্রেফতারের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুক্তি দাবিতে এবং মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার চেয়ে জেলা প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সামবেশ করেন সাংবাদিকরা। তারা তানুর মুক্তি ও সাংবাদিকদের নামে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে তানুর মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা।
সান নিউজ/এফএআর