ফারুক আহমাদ আরিফ
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলা কঠোর লকডাউনের পাঁচদিনে রাজধানীতে দুই হাজার পাঁচশত ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে প্রথম দিন পাঁচশ ৫০ জন, দ্বিতীয় দিনে তিনশ ২০ জন ও তৃতীয় দিনে ছয়শ ২১ জন, চতুর্থ দিন ছয়শ ১৮ জন ও পঞ্চম দিনে চারশ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১ হতে ৭ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন পালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলেই গ্রেফতার, জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের।
লকডাউনের মেয়াদ বাড়লো: তা ছাড়া আজ (৫ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বের সকল বিধি-নিষেধের সময়সীমা ৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিস্তারে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকায় কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটির সুপারিশে গত ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের জন্য সরকার সারাদেশে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করে।
লকডাউনের পঞ্চম দিন: লকডাউনের পঞ্চম দিন সোমবার (৫ জুলাই) বিধিনিষেধ অমান্য করায় রাজধানীর ঢাকায় ৪১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার (৫ জুলাই) ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানা যায়।
ডিএমপির ৮টি বিভাগের রমনা, লালবাগ, মতিঝিল, ওয়ারী, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা এলাকায় সরকারি নিয়ম অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় ৪১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তা ছাড়া ২৪৩ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৯৮ হাজার ৪৫০ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। অন্যদিকে ট্রাফিক বিভাগের অভিযানে ৫২৬টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ১২ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
লকডাউনের চতুর্থ দিন: কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিন রাজধানীতে ৬১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সময় ১৬১ জনকে ৫৪ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। রোববার (৪ জুলাই) ঢাকা মহানগর পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ৪৯৬টি গাড়িকে ১২ লাখ ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তৃতীয় দিন গ্রেফতার: ‘কঠোর লকডাউন’র তৃতীয় দিন শনিবার (৩ জুলাই) রাজধানীতে ৬২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই সময়ে ৩৪৬ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সর্বমোট জরিমানার পরিমাণ ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হওয়ায় ৮৮৫ মামলায় ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করেছে ডিএমপি পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাফিক বিভাগ।
দ্বিতীয় দিন গ্রেফতার: লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবারে ৩২০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। শুক্রবার (২ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিএমপির আটটি ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোর্ট চালিয়ে ২০৮ জনকে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ জরিমানা হয়। এ সময় বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ২১৯টি মামলা দায়ের করে মোট ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ইফতেখারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রথম দিন গ্রেফতার: করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় রাজধানীতে ৫৫০ জনকে গ্রেফতার করে সাজা দেয়া হয় ৮ ব্যক্তিকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫০৭ টাকা জরিমানা করা হয়। ২৭৪টি গাড়িকে মামলা দেয়া হয়েছে। আটক করা হয় ৬টি গাড়ি। রেকারিং করা হয়েছে মোট ৭৭টি গাড়ি। ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক জরিমানা করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০ টাকা।
বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সারাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় মাঠে রাখা হয়েছে ১০৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে। অফিস-আদালত, গণপরিবহন, শপিংমল বন্ধ; জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া সব যান্ত্রিক বাহন চলাচেলেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে ঘরে থাকার। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।
গত ৩০ জুন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে, আনা হবে আইনের আওতায়। যন্ত্রচালিত কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ছাড়া। এ বিধি কার্যকর থাকবে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের পুরোটা সময়।
সাননিউজ/এফএআর