চট্টগ্রাম ব্যূরো :
সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার হতদরিদ্র নারী খাদিজা বেগম। আসলের চেয়ে বেশি টাকা সুদ পরিশোধ করেও সুদি কারবারীর জাল থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছিলেন না তিনি। শেষে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদের সালিশের মুখোমুখি হন খাদিজা বেগম।
সালিশের মুখোমুখি হয়ে ইউনিয়ন পরিষদেই হেনস্তা ও মারধরের শিকার হন দুই কন্যা সন্তানের জননী খাদিজা বেগম। চেয়ারম্যান ও নারী ইউপি সদস্যের নির্দেশে গ্রাম পুলিশরা তাকে মারধর করে কোমরে ও পিঠে গুরুতর জখম করে। মারধরের এই অপমান সইতে না পেরে সীতাকুণ্ড বাজারের দক্ষিণ বাইপাস এলাকায় গাড়িতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে যান খাদিজা। কিন্তু ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে নিবৃত্ত করেন।
পরে এই ঘটনায় খাদিজা বেগম মারধরের অভিযোগ এনে ৩ জনের বিরুদ্ধে সীতাকুন্ড থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আবার পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য হাছিনাও। দুটি অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান সীতাকুণ্ড মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক।
খাদিজা অভিযোগের বিবরণে উল্লেখ করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড নামার বাজার এলাকায় ইতালি কামালের ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। কয়েক বছর আগে খাদিজা বেগমের স্বামী দুলাল মারা যান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে দুই মেয়ে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তিনি। জীবিকার তাগিদে কাজ নেন অন্যের বাড়িতে। কিন্তু মহামারী করোনার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে অনাহারে দিন কাটতে থাকে তাদের।
ক্ষুধার জালা সইতে না পেরে গত বছর একই এলাকার সাহাবউদ্দিন থেকে চড়া সুদে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন খাদিজা। একসময় বিয়ে বাড়িতে সামান্য মজুরির কাজ নিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি সাহাবউদ্দিনকে মোট ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তুু কিছুতেই সাহাবউদ্দিনের সুদের জাল থেকে রেহাই পাচ্ছিলেন না তিনি। দিনের পর দিন সাহাবউদ্দিনের টাকার জন্য চাপ বাড়তে থাকে।
পরে সাহাবউদ্দিন সুদের টাকা উদ্ধারে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। চেয়ারম্যানের নোটিশ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে খাদিজা পরিষদে হাজির হলে চেয়ারম্যান টাকা পরিশোধ করার জন্য নির্দেশ দেন। টাকা দিতে সময় লাগবে বললে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরে তার নির্দেশে নারী ইউপি সদস্য হাছিনা, চৌকিদার আমিন ও আবুল মুনছুর সন্তানদের সামনে লাঠি দিয়ে খাদিজাকে প্রহার করতে থাকে এবং কিল-ঘুষি মেরে মারাত্মক জখম করে। পরে স্থানীয়রা খাদিজাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সন্তানের সামনে মারধর ও অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি।
এদিকে খাদিজার আহাজারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে চারদিকে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে খাদিজাকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন ৫ নং বাড়বকুণ্ড ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী। কিন্তু ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি।
সান নিউজ/আইকে