নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত বুধবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরে জৈনাবাজার আবদার এলাকায় প্রবাসী স্বামীর পাঠানো টাকা লুঠ করতে গিয়ে ফাতেমা ও তার তিন সন্তানকে গলা কেটে হত্যা ও ধর্ষণ করে বলে স্বীকার করেছে গ্রেফতার কিশোর পারভেজ ও তার বাবা কাজিমুদ্দিন।
২৯ এপ্রিল বুধবার অনলাইনে এক প্রেস ব্রিফিংকালে র্যা বের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
গত বুধবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের আবদারের মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের ডুপ্লেক্স বাসায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তার স্ত্রী ডিসিষ্ট স্মৃতি ফাতেমা, বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নুরা, ছোট মেয়ে হাওয়ারিন ও প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলকে। হত্যার আগে মা ও দুই মেয়েকে ধর্ষণও করে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় আজ পাঁচজনকে আটক করে র্যা ব। এরা হলো-কাজিম দ্দিন (৫০), হানিফ (৩২) বশির (২৬) হেলাল (৩০) ও এলাহি মিয়া (৩৫)।
কাজল দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া থাকেন জানিয়ে সারোয়ার বিন কাশেম জানান, তার স্ত্রী ফাতেমা ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। ১৮ বছর আগে তিনি ফাতেমাকে বিয়ে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কাজল শ্রীপুরে জায়গা কিনে এখানেই বাড়ি করে পরিবারকে রাখেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সবাই মাদকাসক্ত। তারা চুরি, জুয়া ও ছিনতাইয়ের মত অপরাধের সঙ্গে জাড়িত। পেশায় এরা কেউ রিকশা চালক, কেউ বা ছোটখাটো কাজ করে। এরা সবাই ভিকটিমের বাসার কাছে আড্ডা দিতো। ঘটনার কিছুদিন আগে তারা জানতে পারে ভিকটিম ফাতেমার স্বামী কাজল মালয়েশিয়া থেকে ২০/৩০ লাখ টাকা পাঠিয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে। তারা সবাই পরিকল্পনা করে সেই টাকা তারা লুট করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৩ এপ্রিল তারা ফাতেমাদের বাসার পেছনে জড়ো হয়। পারভেজ প্রথমে ভেন্টিলেটর দিয়ে ডুপ্লেক্স ওই বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। অন্যদিকে হানিফ ছাদ দিয়ে প্রবেশ করে চিলেকোঠায়। এরপর তারা বাসার গেট খুলে দিলে পারভেজের বাবাসহ অন্যরা বাসায় ঢুকে পড়ে।
হানিফ ও কাজিমুদ্দিন প্রথমে ফাতেমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তার কাছ থেকে হুন্ডির পাঠানো ২০/৩০ লাখ টাকা চায়। ফাতেমা এরকম কোনো টাকা পাঠানো হয়নি বলে জানায় এবং বাসায় থাকা ৩০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেয়। এসময় তারা দু’জন ফাতেমাকে ধর্ষণ ও হত্যা করে।
এদিকে অন্য ঘরেও চলে লুটপাট ও ধর্ষণ। পারভেজ ও তার বাবা কাজিমুদ্দিনসহ সবাই বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নুরা (১৬) ও ছোট মেয়ে হাওয়ারিনকে (১৩) ধর্ষণ ও হত্যায় অংশ নেয়।
তবে প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলকে (৮) হত্যা করা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তারা। এক গ্রুপ তাকে হত্যা করতে না চাইলেও অন্য অংশ সাক্ষী না রাখার পক্ষে মত দেয়। পরে বাক প্রতিবন্ধী শিশুটিকেও হত্যা করে।
এ ঘটনায় আরো ৪/৫ জন জড়িত থাকতে পারে পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম জানান, তাদেরকেও গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
সারোয়ার বিন কাশেম আরো জানান, এর আগে পিবিআই এর হাতে গ্রেফতার পারভেজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। সেখানে সে এ ঘটনায় একাই জড়িত বলে স্বীকার করে।
এর পেছনে কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির। পারভেজ এর আগেও এক শিশুকে ধর্ষণের পর খুন করে। ওই ঘটনায় সে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে জামিনে ছাড়া পায়। এবারও সে একই ধরনের ঘটায় জড়ায় তার বাবাসহ অন্যদের নিয়ে। সে জানে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে এবারও সে ছাড়া পাবে। হয়তো এরকমটা চিন্তা করেই বাবাসহ অন্যদের বাঁচাতে সে নিজের কাঁধে সব দোষ নেয়।
সান নিউজ/সালি