নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. কাজী সাবিরা রহমানের হত্যার ঘটনায় এবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সহভাড়াটে নূরজাহানকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। তিনি মাঝে-মধ্যে সাবিরার মেয়েকে পড়াতেন।
এসব তথ্য জানিয়েছেন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পুলিশ বলেছে, এ চিকিৎসকের হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তার মুঠোফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে রহস্য উদ্ঘাটনের কাজ চলমান।
গত ৩০ মে রাতে কলাবাগানে ভাড়া বাসায় খুন হন চিকিৎসক সাবিরা। ৩১ মে সকালে তার রক্তাক্ত ও দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সাবিরার গলা কাটা, পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পোড়া ছিল। এ ঘটনায় করা মামলা কলাবাগান থানা-পুলিশ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং র্যাব ছায়া তদন্ত করছে।
এ ঘটনায় নিহত সাবিরার ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। এখন পর্যন্ত ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী, চিকিৎসকের সহভাড়াটেসহ কমপক্ষে ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে এখনো হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং কে বা কারা জড়িত তা জানতে পারেনি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, চিকিৎসক সাবিরা হত্যাকাণ্ডে এখনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা সম্ভব হয়নি। তবে পরিচিতজনেরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে তাদের ধারণা।
একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত জানুয়ারিতে তৃতীয় তলায় ভাড়া নেন সাবিরা রহমান। পরের মাসে তিনি কানিজ সুবর্ণা ও নুরজাহানের কাছে দুটি কক্ষ ভাড়া দেন। দুই সহভাড়াটের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া তুলতেন তিনি।
ঈদের আগে গোপালগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া নূর জাহান। সাবিরা খুন হওয়ার সময়ও তিনি বাড়িতে ছিলেন। তবে ঘটনার সময় সাবিরার সঙ্গে বাসায় ছিলেন যশোরের মেয়ে মডেল কানিজ সুবর্ণা। থানা–পুলিশের পাশাপাশি কানিজ সুবর্ণাকে পিবিআইসহ অন্যান্য সংস্থাও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
সাবিরার ফ্ল্যাটটি ছিল ৩ কক্ষের। একটিতে থাকতেন তিনি। দুই কক্ষে দুই তরুণী থাকতেন। তার পাশের কক্ষে থাকা কানিজ সুবর্ণা মডেলিং করেন।
তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, যে বাসায় চিকিৎসক সাবিরা থাকতেন, সেই বাসায় নিচতলায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তারক্ষী রমজান দায়িত্ব পালন করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে কানিজ পুলিশকে বলেছেন, তিনি ঘটনার দিন সকাল ৬টায় প্রাতর্ভ্রমণে যান। তখন সাবিরার কক্ষের দরজা বন্ধ ছিল। সকাল সাড়ে ৯টায় ফিরে ওই কক্ষ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন। তিনি দারোয়ানকে ডাকেন। দারোয়ান ডাকেন আরেক নারীকে। পরে মিস্ত্রি দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তারা। তখন কক্ষটিতে আগুন দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেন। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়। সাবিরা বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। কানিজ সুবর্ণা কলাবাগান থানা-পুলিশকে খবর দেন। পরে সাবিরার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।