নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রেম করে যাকে বিয়ে করেছেন, তিনিই ভালো বেতনের কাজের লোভ দেখিয়ে পাচারকারীদের কাছে বেচে দেন। পরে মেয়েটিকে সীমান্ত পার করে ভারতের চেন্নাইয়ে নিয়ে আটকে রেখে করা হয় নির্যাতন। ভাগ্যক্রমে তিনি ৩ মাস পরে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে কয়েকজন এক বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নারী পাচার চক্রের সন্ধানে নামে পুলিশ। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী তিন জেলা—সাতক্ষীরা, যশোর ও ঝিনাইদহ থেকে নারী পাচারে যুক্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসা তরুণীরা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
তাদেরই একজন রাজধানীর শনির আখড়া এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী। একটি অডিওতে তাঁকে বলতে শোনা গেছে কীভাবে পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি।
অডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, তিন বছর আগে প্রেম করে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে শনির আখড়ায় থাকতে শুরু করেন। তবে সংসারে ছিল অর্থকষ্ট। স্বামী তাঁকে চাকরি করতে বললে তিনি পোশাকশ্রমিকের কাজ করতে রাজি হননি। পরে স্বামী তাঁকে দেশের বাইরে ভালো বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করার কথা বলেন। তাঁকে বলেন, বাইরে গেলে দু-তিন মাস থাকলে ভালো আয় হবে। এরপর ব্যবসা করলে তাঁরা ভালোভাবে চলতে পারবেন। তখন আর কাজ করতে হবে না। তিনি প্রথমে আপত্তি করলেও পরে রাজি হন। এরপর স্বামী তাঁকে শনির আখড়ার বাসায় একটি মেয়ের হাতে তুলে দেন। সেই মেয়ে তাঁকে সাতক্ষীরায় নিয়ে যান। সেখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে তাঁরা কলকাতায় যান। সেখানে একটি ঘরে রাখা হয় তাঁদের। এরপর তাঁকে ভারতের পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়া হয়।
তরুণী জানান, ওই নারী তাঁকে বিমানে করে চেন্নাই নিয়ে যান। সেখানে একটি ঘরে তাঁকে আটকে রাখা হয়। এরপর এমন অত্যাচার চলতে থাকে, যা বলার মতো নয়। এ সময় তিনি কান্নাকাটি করলে মারধর করে বলা হয়, তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি পালানোর সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ঈদুল ফিতরের আগে সুযোগমতো পালিয়ে দেশে চলে আসেন তিনি। ওই তরুণী পাচারকারী চক্রসহ তাঁর স্বামীর বিচার দাবি করেন।
পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. হাফিজ আল ফারুক গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ভারতে পাচার হওয়া নারীদের সে দেশের ‘আধার কার্ড’ বা পরিচয়পত্র তৈরিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বেঙ্গালুরু পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ভারত থেকে ফিরে আসা অনেকেই পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করছেন।
গত মাসের শেষ দিকে ভারতে ওই বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে ঢাকার মগবাজার এলাকায় টিকটক হৃদয় হিসেবে পরিচিত রিফাদুল ইসলামকে (২৬) নির্যাতন করতে দেখা যায়। গত ২৭ মে টিকটক হৃদয়সহ ছয়জনকে ভারতের বেঙ্গালুরুর পুলিশ গ্রেপ্তার করে।