চট্টগ্রাম ব্যূরো :
হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার। তার হয়ে চট্টগ্রাম কারাগারে তিন বছর ধরে সাজা খাটছেন মিনু আক্তার। এবার তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (৭ জুন) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সেই সাথে মিনু আক্তারের সাজাভোগের বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু আদালত-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ নাসের, আইনজীবী বিবেকানন্দ ও নুরুল আনোয়ারকে লিখিত ব্যাখা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
আদালতে মিনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির জানান, কারাগারের একটি বালাম বই দেখতে গিয়ে মিনুর সাজা খাটার বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে দেখা যায় একজনের পরিবর্তে যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন এই নারী।
পরবর্তী সময়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে এ মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালত। দ্রুত সমাধানের জন্য আদেশের একদিন পর মামলার উপনথি হাইকোর্টে পাঠানো হয় বিশেষ বাহকের (¯েপশাল ম্যাসেঞ্জার) মাধ্যমে।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউট (পিপি) মো. নোমান চৌধুরী বলেন, আদালতে সংরক্ষিত ছবি সম্বলিত নথিপত্র দেখে কুলসুম আক্তার আর মিনু এক নয় বলে নিশ্চিত হয়েছেন। যেহেতু ইতিমধ্যে এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছে তাই মামলার উপনথি দ্রুত সময়ের হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান নারী ওয়ার্ড পরিদর্শনে যান। সেখানে মিনু জানান তিনি কোনো মামলার আসামি নন। মূলত অন্যের হয়ে আদালতে এসে ফেঁসে গেছেন। পরে ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মিনু আক্তার দাবি করেন তিন বছর আগে রমজান মাসে ভোগ্যপণ্য দেওয়ার নাম করেই কুলসুমা আক্তার তাকে আদালতে নিয়ে আসেন। তার শেখানো মতো আদালতের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে কারাবাস করতে হচ্ছে তাকে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আদালত সূত্র জানায়, মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগরের রহমতগঞ্জের একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাইয়ে গলাটিপে হত্যা করা হয় গার্মেন্টসকর্মী কোহিনূর আক্তারকে। এরপর রহমতগঞ্জে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয় সেই লাশ। কোহিনুর আত্নহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন গার্মেন্টসকর্মী কুলসুম আক্তার।
এরপর থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে কেহিনুরকে হত্যা করা হয়েছে বলে রিপোর্ট দিলে সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম পারভীন ওই মামলায় আসামি কুলসুম আক্তারক যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন।
সাজার পরোয়ানামূলে আদালতে আত্নসমর্পণ করে কুলসুম আক্তারের বদলি মিনু গত ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান। নামের মিল না থাকলেও মিনুকে কুলসুম আক্তার বলে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখা হয়েছে তিন বছর ধরে।
সান নিউজ/ আইকে