নিজস্ব প্রতিবেদক: আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফির (৩০) শিকার হয়েছেন ৫০০ তরুণী। এদের সবাইকে পাচার করা হয় ভারতে। টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে পাচার করেন প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণীকে।
মঙ্গলবার (১ জুন) সন্ধ্যায় র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য দেন।
ভারতে বাংলাদেশি তরুণী যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের তথ্য বেরিয়ে আসে। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন চক্রের অন্যতম মূলহোতা বস রাফিসহ ৪ সদস্য।
র্যাব বলছে, বস রাফি ৮ বছরে ৫০০ তরুণীকে ভারতে পাচার করেছেন। তাদের যৌন কাজ করতে বাধ্য করেন। এ মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০ জন।
গ্রেপ্তার বাকি ৪ সদস্য হলেন- রাফির অন্যতম নারী সহযোগী সাহিদা বেগম ওরফে ম্যাডাম সাহিদা (৪৬), ইসমাইল সরদার (৩৮) ও আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ (২৬)।
তিনি বলেন, রাফির শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ৮ বছর আগে থেকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে তার যাতায়াত শুরু। প্রথমে সেখানে ট্যাক্সি ড্রাইভার ও পরে হোটেলে রিসোর্ট কর্মচারী এবং কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ২ বছর আগে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। হৃদয়ের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক তরুণীকে ভারতে পাচার করেন তিনি।
ভারতে যে বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে এতে টিকটক হৃদয়ের সম্পৃক্ত পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নারী পাচার চক্রের মূল বিষয় তুলে ধরে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ওই ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা ২৭ মে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় টিকটিক হৃদয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে।
এর ধারাবাহিকতায় ৩১ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা ও র্যাব-৩-এর অভিযানে ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল থেকে আশরাফুল ইসলাম ওরফে বসসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করতেন তারা।
আর এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে বিভিন্ন বয়সের নারী ও তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন টিকটক হৃদয়। এই গ্রুপে যেসব তরুণী ছিলেন, তাদের মডেল বানানোসহ ও বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করতেন। পরবর্তীতে ভারতে বিভিন্ন সুপার শপ ও বিউটি পার্লারে চাকরি দেয়ার কথা বলে বস রাফির সহযোগিতায় এসব তরুণীদের বিদেশে পাচার করতেন। ভারতে তাদের পাচারের পর প্রথমে একটি সেফ হাউজে নেয়া হতো।
র্যাব জানায়, সেফ হাউজে তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এবং জোর করে মাদক সেবন করতে বাধ্য করানো হতো। মাদক সেবনের পর তাদের জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করা হতো। যাতে তাদের পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করা যায়।