নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুনিয়া জুরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববাসী প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের থাবায় নাকাল। বাংলাদেশেও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই প্রাণঘাতী রোগীর সংখ্যা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে টানা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গরীব, দুঃস্থ, অসহায় মানুষদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থাও করেছে সরকার। এরই মধ্যে বিভিন্ন খাতে প্রায় প্রণোদনা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেই ত্রাণ সামগ্রী অনেক ক্ষেত্রেই দরিদ্রদের কাছে না পৌঁছে জনপ্রতিধিনিধারা নিজের ভাণ্ডারে তুলেছেন। করোনা রোগী শনাক্তের চেয়েও বেশি গতিতে বাড়ছে ত্রাণ সামগ্রী চোরের সংখ্যা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ চোর পাওয়া যাচ্ছে; যাদের বেশিরভাগই জনপ্রতিনিধি।
জনপ্রতিনিধিরা এই দুর্যোগে আর্ত-মানবতার সেবার জন্য জনগণের পাশে দাঁড়াবে, নিজেদের সবকিছু উজাড় করে গরীব, দুঃস্থ, দুর্ভাগা মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কিন্তু ঘটছে তার উল্টো চিত্র। জনপ্রতিনিধিরা গরীবদের জন্য দেয়া ত্রাণের চাল আত্মসাৎ করছে, এমনকি ওএমএস-এর চাল আত্মসাতেরও খবর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার হওয়া ত্রাণগুলো মিলছে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের গুদামে।
যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যারা এই সময়ে দুর্নীতি করবে তাঁদের ক্ষমা করা হবেনা; কিন্তু কে শোনে কার কথা? ত্রাণ সামগ্রী চোরেরা দুর্বিনীত হয়ে উঠছে।
তাই প্রশ্ন উঠছে জনপ্রতিধিনিরা জনগণের বিপদে বন্ধ না হয়ে কেন গরীব দুঃস্থদের পাশে না দাঁড়িয়ে তাদের জন্য বরাদ্দের ত্রাণ আত্মসাৎ করছেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনপ্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে বাণিজ্য লাগামহীন হয়ে উঠেছে; টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বিক্রি করছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে বাণিজ্যের হারটাই বেশি। টাকা দিয়ে মনোনয়ন দেয়া পুরোপুরি রীতিতে পরিণত হয়ে গেছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মনোনয়ন পাওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত একটি মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয় জনপ্রতিনিধি হওয়ার দৌড়ে থাকা প্রার্থীদের। আর তাই নির্বাচিত হবার পর সবার আগে নির্বাচনে খরচের টাকা তুলতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ। নির্বাচনকে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হিসেবে জনপ্রতিনিধি হওয়ার দৌড়ে থাকা প্রার্থীরা বিনিয়োগ করে থাকেন; ফলে করোনা মৌসুমকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখে খরচ-কৃত টাকা সুদে-আসলে তুলে নিতেই এমন চুরির ঘটনা ঘটছে।
তৃণমূল-পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা কেন এমন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন তার উত্তরও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের বড় নেতাদেরও অনুসরণ করছে তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা।
আবার মানুষের সাথে সম্পৃক্তা না রেখে হঠাৎ করে জনপ্রতিনিধি হওয়া বা নেতা বনে যাওয়ার কারণেই এমনটি হতে পারে বলেও মনে করেছেন তারা। এসব জনপ্রতিনিধিদের হাইব্রিড হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন যেদল ক্ষমতায় এসেছে সেই দলের সদস্য হওয়ার কারণে এদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নাই। সে সাথে সাধারণ মানুষের সাথে জন-সম্পৃক্ততা না থাকার কারণেই রাজনৈতিক দর্শন বা আদর্শহীন এসব হাইব্রিড নেতারা। ফলে মানুষের বিপদে এগিয়ে না এসে নিজের পকেট ভারি করেই তারা ব্যতিব্যস্ত। জনপ্রতিনিধির পদকে টাকা বানানোর মেশিন হিসেবে বেছে নিয়েছে কিছু অসাধু রাজনীতিক বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এভাবে চলতে রাজনীতি বা জনপ্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে হাইব্রিডদের দাপট চলতে থাকলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে যাবে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাই তাদের মতে দ্রুততম সময়ে এই হাইব্রিড দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিদের আইনের আওতায় এনে সাজা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে জনপ্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশেষ নজরদারি বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।