নিজস্ব প্রতিবেদক : ইসলামি বক্তা মো. হাসানুর রহমান হুসাইন নক্সেবন্দীর বিরুদ্ধে মামলা করে এখন ঘরছাড়া তার চতুর্থ স্ত্রী শিরিনা আক্তার। তার অভিযোগ, মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। কারাগার থেকে হাসানুর রহমানের পক্ষে মামলার অন্য আসামিরা শিরিনাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সন্তানদের কথা ভেবে রাজধানী ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এছাড়া মামলা থেকে সরে যেতে আইনজীবীকেও বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে আসামিপক্ষ।
গত ৬ মার্চ সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার জন্য কোর্টে যাচ্ছিলেন শিরিনা আক্তার। এসময় রাস্তায় মামলার ৪ নম্বর আসামি সুজন মোল্লাসহ (মামা শ্বশুর) চার-পাঁচজন তার গতিরোধ করে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন শিরিনা। মামলা তুলে না নিলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন হাসানুর রহমান হোসাইন নক্সেবন্দী, এমন অভিযোগ করেন তিনি।
বর্তমানে স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক ও নারী শিশু নির্যাতনের মামলায় কারাগারে রয়েছেন হাসানুর রহমান নক্সেবন্দী।
শিরিনা আক্তার বলেন, ‘আদালত হাসানুর রহমানকে জেলহাজতে পাঠালেও মামলার অন্য আসামিরা মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে আমাকে। এতে আমি আমার সন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাই আমার জন্য কাল হয়ে উঠেছে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ ব্যাপারে তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
হাসানুর রহমান জামিনে বের হলে যে কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন শিরিনা। তিনি দাবি করেন, তাকে বিয়ে করার পর আরও হাসানুর রহমান আরও কয়েকটি বিয়ে করেছেন বলে পরে তিনি জানতে পারেন।
মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার ইরফান বলেন, ‘মামলা আপস করতে এবং তুলে নিতে আসামিপক্ষ বিভিন্নভাবে আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। এছাড়া আমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেককে দিয়ে বিভিন্ন তদবিরও চালাচ্ছে। এছাড়া বাদীকেও মামলা তুলে নিতে মামলার অন্যান্য আসামিরা তাকে চাপ দিচ্ছে। নিরাপত্তা শঙ্কায় তিনি এখন ঘর ছাড়া।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, হাসানুর রহমান নক্সেবন্দীর বিরুদ্ধে তার আরও দুই স্ত্রীর করা দুটি মামলা চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা আদালতে চলমান রয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য মামলার বাদীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো হাসানুর রহমান। বিভিন্ন সময় বাদী শিরিন আক্তার তার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিলেও প্রতিনিয়ত আরও যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলো। শারীরিক নির্যাতনের কারণে গত বছরের জুন মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে কয়েকদিন ভর্তি ছিলেন শিরিনা। পরে নারী নির্যাতনের বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। তখন পুলিশের সহায়তায় অঙ্গীকারনামা দিয়ে নির্যাতনের সে অভিযোগ থেকে রেহাই পান হাসানুর রহমান। কিন্তু এরপরও বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময় স্ত্রীর ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
গত ৩ জানুয়ারি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল ঢাকা-৩ এ একটি মামলা দায়ের করেন স্ত্রী শিরিনা আক্তার। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় নক্সেবন্দীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মতিঝিলের কমলাপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে মতিঝিল থানা পুলিশ।
সান নিউজ/এসএম