নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে আটককৃত আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এর অবৈধ অর্থ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় দুদক তদন্ত শুরু করে। তদন্তে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় প্রায় ২২৩ কোটি টাকা পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (১৫ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, তদন্তকালে জব্দ করা রেকর্ডপত্র, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আসামির বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সম্রাট অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে সহোদর ভাই ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ও মোস্তফা জামানের নামে রাজধানীর কাকরাইলে ৪২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনে নিজে ভোগদখল করেছেন। এছাড়া, আয়কর নথির মাধ্যমে উৎসবিহীন ব্যবসার মূলধন প্রদর্শন এবং ৩ কোটি ৪০ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে।
অন্যদিকে, সম্রাট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় তিনটি ক্যাসিনোতে ২ কোটি ৩ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার ক্যাশ আউট করে নিজের নামে গচ্ছিত রেখেছেন বা বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে দুদকের তদন্তে। ফলে আসামি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বেনামে কেনা ফ্ল্যাটসহ অবৈধভাবে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগদখলে রেখে দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
যার মধ্যে ২১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা বিদেশে (সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া) পাচার, আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়ালের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। অর্থপাচারের তথ্য পেতে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় এমএলআর পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।
২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজ নামে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন সম্রাট।
ঠিকাদার জিকে শামীমসহ বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এরকম প্রায় ২০০ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করছে দুদক।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি দল অনুসন্ধান করছে।
সান নিউজ/এনকে/এস