নিজস্ব প্রতিবেদক : অধিক মুনাফার লোভে দেশে খাদ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অবৈধ মজুদদারের বিচারে গঠিত হচ্ছে বিশেষ খাদ্য আদালত। এজন্য খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন-২০২০র খসড়া তৈরি করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্যপণ্য অবৈধ মজুদদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রেখে ১৯৫৬ সালের দ্য ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্টও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি চাল, পেঁয়াজ, তেলসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যের অবৈধ মজুদারের মাধ্যমে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের ভোগান্তি সৃষ্টি করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে বিব্রত হচ্ছে সরকার। এ অবস্থায় কঠোর আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইন সেল) রেজাউল আযম ফারুকী বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) বলেন, বিদ্যমান দ্য ফুড গ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাক্টিভিটি) অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯ হালনাগাদ করে নতুন আইন করা হচ্ছে। নতুন আইন অনুযায়ী খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনের ক্ষেত্রে অপরাধের শাস্তি কঠোর হবে।
১৯৭৯ সালের আইন অনুযায়ী কেউ এসব ক্ষেত্রে অপরাধ করলে ৩ মাসের আটকাদেশ দেয়া যেত। সেভাবে কোনো শাস্তির কথা ছিল না। ১৯৫৬ সালের ফুড স্পেশাল কোর্ট অ্যাক্টও যুগোপযোগী করা হবে। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইনে উল্লেখ করা অপরাধগুলোর বিচার হবে ফুড স্পেশাল কোর্ট অ্যাক্টের আওতায়।
খসড়া আইনে খাদ্যদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যে কোনো প্রকার খাদ্যশস্য যেমন- চাল, ধান, গম ইত্যাদি, ভোজ্যতেল যেমন- সয়াবিন, পামঅয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, অলিভ অয়েল, সরিষার তেল এবং অন্য সব ভোজ্যতেল, খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতের কাঁচামাল, পেঁয়াজ, লবণ, চিনি, ডাল; প্রক্রিয়াজাত যে কোনো খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য প্রচলিত আইনে সংজ্ঞায়িত খাদ্য।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ভোগের উদ্দেশ্য ছাড়া পরিবহন, গুদাম বা যে কোনো স্থানে সরকার ঘোষিত পরিমাণের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রাখা এবং খাদ্যশস্যের হিসাব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দেখাতে ব্যর্থ হলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া মজুদ করা খাদ্যশস্যের উৎস সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করা বা গোপন করা। মজুদ খাদ্যশস্যের মান বজায় রাখার উদ্দেশ্যে প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত না করায় খাদ্যশস্যের গুণগতমান কমে যাওয়া। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ও মজুদ রাখাও হবে অপরাধ।
এছাড়াও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে- এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট-১৯৫৬ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইনের আওতায় প্রয়োজনীয় লাইসেন্স গ্রহণ না করা। পুরনো চাল বা অন্যান্য খাদ্যশস্য অবৈধভাবে গুদামে মজুদ রেখে অসৎ উদ্দেশ্যে পলিশিং বা অন্যান্য রূপে মিশ্রণ করে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের আওতায় সরকারি গুদামে সরবরাহ করা। অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের সময় গুদামের আমদানি করা চাল বা গম সরকারি গুদামে সরবরাহ করা।
স্থানান্তর সংক্রান্ত অপরাধ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- খাদ্যশস্য স্থানান্তরকালে খাদ্যশস্যের মান বজায় রাখার জন্য প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় খাদ্যশস্যের গুণগতমান কমে যাওয়া। পরিবহন করা খাদ্যশস্যের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মানুষের ভোগের অনুপযুক্ত খাদ্যশস্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা।
জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপায়ে ভোগের অনুপযুক্ত খাদ্যদ্রব্য বিনষ্ট করা। ইনভয়েস বা চালানে উল্লেখ করা কেন্দ্রে খাদ্যশস্য খালাস না করে অন্যভাবে মজুদ স্থানান্তর দেখানো। পরিবহনকালে ইনভয়েস বা চালানের সঙ্গে দেয়া নমুনা মোতাবেক খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত নিুমানের খাদ্যদ্রব্য গুদামে হস্তান্তর করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
সান নিউজ/এসএ/এস