নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্যাসিনোকাণ্ডে বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার অন্য এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে টাকাভর্তি কয়েকটি সিন্দুক উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ স্বর্নালঙ্কারও উদ্ধার করা হয়। ৫টি সিন্দুকে গচ্ছিত মোট টাকার পরিমাণ আনুমানিক ২০ কোটি টাকা। এছাড়া পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরও পাওয়া গেছে সেখানে। স্থানীয়রা বলছেন, এ যেন টাকার খনি।
২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে রাজধানীর পুরান ঢাকায় ওয়ারীর ১১৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ৬ তলা বাড়ির নিচ তলায় এ অভিযান চালানো হয়। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
র্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম ফয়জুল ইসলাম বলেন, নিচতলার ওই বাসায় কেউ থাকতো না। বেশ সুরক্ষিত অবস্থায় রাখা ছিলো সবকিছু। এনু-রুপনের দুই ডজন বাড়ির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা এ বাসার সন্ধান পাই।
তিনি বলেন, অভিযানে ওই বাড়িতে টাকা ভর্তি পাঁচটি সিন্দুক পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে পাঁচ কোটি টাকার এফডিআর এবং বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে টাকার অঙ্ক ২০-২৫ কোটি টাকাও হতে পারে। টাকা গোনার জন্য মেশিন আনা হয়েছে। ওই বাড়িতে বেশ কিছু ক্যাসিনো সরঞ্জামও পাওয়া গেছে, যেগুলোতে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সিল লাগানো ছিলো।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনদের গেণ্ডারিয়ার বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালিয়েছিল র্যাব। সে অভিযানে চারটি ভল্ট ভেঙে নগদ এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও ৭৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই ভাইয়ের এ বাড়িটি ছিল টাকার গোডাউন। এনামুল ও রূপন গত ছয় থেকে সাত বছরে পুরান ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কমপক্ষে ১২টি। ফ্ল্যাট কিনেছেন ছয়টি।
স্থানীয় লোকজন জানান, এ দুই ভাইয়ের মূল পেশা জুয়া। জুয়ার টাকায় এনামুল ও রূপন কেবল বাড়ি ও ফ্ল্যাটই কেনেননি, ক্ষমতাসীন দলের পদও কিনেছেন। ২০১৮ সালে এনামুল ছিলেন গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালক। ভাই রূপন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পদ পান। সরকারি দলের এসব পদ-পদবিকে জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার নির্বিঘ্নে চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন তারা।
গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকেই আলোচনায় আসেন দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া। অভিযানের পর থেকেই তারা পলাতক ছিলেন। অবশেষে গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর অদূরে কেরাণীগঞ্জ থেকে এনামুল ও রূপনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
ওই ঘটনার পর মোট সাতটি মামলার করা হয়, যার মধ্যে অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়া পরিচালনা এবং অর্থ-পাচারের অভিযোগে চারটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
সরকার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। সেদিন থেকে পর্যায়ক্রমে ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো হয়।
সান নিউজ/সালি