বরগুনা প্রতিনিধি
নবম শ্রেণি পড়ুয়া ১৪ বছরের কিশোরীকে অপহরণে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার এম এ আজিমের একের পর এক অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে বরগুনার নাগরিক সমাজ।
বুধবার (০৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে সর্বস্তরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে আজিমের বিচার চান তার হাতে নির্যাতনের শিকার ও ভুক্তভোগী কয়েকজন তরুণীও।
তাদের মধ্যে এক ভুক্তভোগী তরুণীর অভিযোগ, দুবছরের আগে তিনি যখন নবম শ্রেণির ছাত্রী তখন আজিম ও তার মদদদাতা ঢাকা কার্যালয়ের বস সময় টেলিভিশনের সিনিয়র সংবাদকর্মী অনৈতিক কার্যকলাপের শিকার হন। তিনি সমাবেশে বলেন, সাংবাদিক আজীমের উপরস্থ বস সময় টেলিভিশনের ওই সিনিয়র সংবাদকর্মী কয়েক বার বরগুনায় এসেছিলেন। এ সময় ওই ব্যক্তিকে আজিম সিনেমার ডিরেক্টর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তখন তারা তাকে সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ এবং ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার কথা বলেন। পরে আজিম তাকে ঢাকায় ওই সংবাদকর্মীর কাছে নিয়ে যান। তাকে আজিম এবং ওই ব্যক্তি ঢাকায় আলাদা বাসা রেখে থাকার কথা বলেন এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেযন। তার সঙ্গে আজিম আপত্তিকর আচরণ করেন। এরপর সেখান থেকে নানা কৌশলে এড়িয়ে আসেন বলে মেয়েটি তার বক্তব্যে জানান।
আরও কয়েকজন মেয়েকে এমন ফাঁদে ফেলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মেয়েটি। তিনিসহ অন্য ভুক্তভোগীরা মানববন্ধনে ঢাকার ওই সাংবাদিক এবং আজিম দুজনেরই বিচার দাবি করেন।
বরগুনা শহরের এক বস্ত্র ব্যবসায়ীর নবম শ্রেণিতে পড়ুুয়া মেয়েটিকে অপহরণের অভিযোগে তার কাকা গত শুক্রবার (০২ অক্টোবর) রাতে সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ (সংশোধিত) এর ৭/৩০ ধারায় আজিম এবং তার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু গ্রাফিক্স ডিজাইনার শুভ সেন (২৬) ও একাত্তর টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি ইমরান হোসেন টিটুর (২৭) নাম উল্লেখ ও ২/৩ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
সদর থানা পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে মেয়েটিকে জোরপূর্বক একটি সাদা প্রাইভেটকারে (নং-ঢাকা মেট্রো-গ ১৭-৮২৩৪) করে নিয়ে যান সাংবাদিক আজিমসহ দুর্বৃত্তরা। এ সময় ২নং সাক্ষী চিৎকার দিলে প্রাইভেটকারটি দ্রুতগতিতে বরগুনা টাউন হলের দিকে চলে যায়।
শনিবার (০৩ অক্টোবর) ভোররাতে বরগুনা সদর থানা পুলিশ ও পটুয়াখালীর মহিপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার গোল্ডেন ইন আবাসিক হোটেল থেকে সাংবাদিক আজিমকে গ্রেপ্তার ও অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করে। পরে বরগুনায় এনে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে আজিমকে কারাগারে পাঠানো ও ভিকটিমকে পরিবারের কাছে দেওয়া হয়।
পরদিন অপহরণে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি বরগুনা শহর থেকে জব্দ করে পুলিশ। আদালতের নির্দশে অপহৃতা মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। মামলাটির ২ নম্বর আসামি শুভ ও ৩ নম্বর আসামি টিটু এখনও পলাতক, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে এম এ আজিম ও তার মদদদাতা সময় টেলিভিশনের ঢাকা কার্যালয়ের ওই সিনিয়র সংবাদকর্মীর কুশপুত্তলিকা দাহ এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
বরগুনা জেলা কমিউনিটি পুলিশিং এবং জেলা এনজিও ফোরামের সভাপতি মোতালেব মৃধার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডারর্স ফোরামের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, প্রেসক্লাব সভাপতি সঞ্জীব দাস, পাবলিক পলিসি ফোরামের সভাপতি মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চিত্ত রঞ্জন শীল, জেলা মহিলা পরিষদের সহ সভাপতি খাদিজা বেগম, জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বরগুনা আঞ্চলিক শাখার সভাপতি সুখরঞ্জন শীল, সার্বজনীন আঁখড়া কমিটির সভাপতি সন্তোষ কর্মকার, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মুনিরুজ্জামান মুনির, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মাদ ওয়ালিউল্লাহ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ শিকদার শিবু, সমাজকর্মী মারুফ রহমান মৃধা, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস খান ইমন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খোকন কর্মকারসহ স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠকরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আজিম একজন মফস্বল সাংবাদিক হয়ে যেভাবে বিলাসী জীবনযাপন করতেন, সেটা অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু হয়েছে। তার অর্থের উৎস কি? কিভাবে এতো অঢেল সম্পদের মালিক হলেন, সেটা দুদক ও প্রশাসন খোঁজ নিয়ে দেখলে থলের বেড়াল বের হয়ে আসবে। আজিম বরগুনায় আলোড়ন থিয়েটার নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন করে বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের তার ফাঁদে ফেলে তাদের ব্ল্যাককমেইল করতেন।’
‘
এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই আজিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আরও অনেক আজিমের সৃষ্টি হবে। তাই কিশোরী অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আজিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান মানববন্ধনকারীরা।
বক্তারা আরো বলেন, ‘টাউনহল ব্রিজ সংলগ্ন খাকদোন নদী দখল করে গড়ে তোলা ভবনের ভেতরেই আজিম সকল অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আঁখড়া বানিয়েছিলেন। তার মোবাইল, ল্যাপটপ ও অফিস-বাসায় তল্লাশি চালালে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসবে।’ তাই প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
সান নিউজ /এআর