নিজস্ব প্রতিবেদক:
পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধের জেরে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের ছেলেকে খুন করে পালিয়ে যান কবির মিয়া (৪০)। হত্যার পর থেকে তিন বছর পরিচয় গোপন করে আত্মগোপন করেছিলেন। ছদ্মবেশে ট্রাকও চালাতেন তিনি।
তবে, ছদ্মবেশ ধারণ ও ট্রাকচালক সেজেও শেষরক্ষা হয়নি। হত্যার তিন বছর পর অবশেষে দুর্ধর্ষ এই খুনি ও ডাকাতকে গ্রেপ্তারে সমর্থ হয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা বহেরারচালা এলাকা থেকে শুক্রবার (২ অক্টোবর) তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো উত্তরের একটি দল।
গ্রেপ্তার হওয়া কবির নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার খামারেরচর এলাকার আব্দুল হাই এর ছেলে। গ্রেপ্তারের পর সিআইডি জানিয়েছে, শুধু ওই এলাকার নারী ইউপি সদস্য রিনা বেগমের ছেলে সোহরাব হত্যাই নয়, তার বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা, একটি ডাকাতি মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
সিআইডি কার্যালয়ে শনিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি মাইনুল হাসান জানান, 'একই এলাকার ইউপি সদস্য রিনা আক্তারের সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধের জের ধরে তার ছেলে ফরিদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন কবির মিয়া। হত্যার পর থেকে তিন বছর পরিচয় গোপন করে আত্মগোপন করেছিলেন কবির। পরবর্তীতে তিন ছদ্মবেশে ট্রাক চালাতেন।’
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, আসামি কবির মিয়ার সঙ্গে নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ড নারায়ণপুরের ইউপি সদস্য রিনা বেগমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে কবির রিনা বেগমের ছেলে ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে রিনা তার ছেলে ফরিদকে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেন।’
‘এই মামলার অন্যতম আসামি বাচ্চু মিয়া ও রিনা বেগমের ছেলে সোহরাব ওরফে মূসা একসঙ্গে রিনার বাসায় ঘুমাতেন। কবির ও একই এলাকার শিপন, বাচ্চু মিয়াকে প্রস্তাব দেন, ফরিদকে ডেকে এনে তাদের কাছে দিতে। বাচ্চু মিয়া কবিরকে জানান, ফরিদ কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। তখন কবির ফরিদের যেকোনো ভাইকে ডেকে আনার প্রস্তাব দেন বাচ্চু মিয়াকে। বাচ্চু মিয়া তার এই প্রস্তাব অস্বীকার করলে শিপন ও কবির বাচ্চু মিয়াকে ভয় দেখান এবং পরে তাকে কিছু টাকা দেন।’
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, ‘২০১৭ সালে ১২ অক্টোবর রাত দুইটার দিকে শিপন ও কবির বাচ্চু মিয়াকে ডাক দিয়ে রিনা বেগমের বাড়ির বারান্দার সামনের রুম থেকে বের করে নিয়ে আসেন। পরিকল্পনা অনুসারে বাচ্চু মিয়া সোহরাবকে নিয়ে ঘর থেকে বের হন। তখন শিপন ও কবির সোহরাবকে জাঁপটে ধরে মুখে গামছা বেধে কুকুর মারা স্কুলের পিছনে নিয়ে যান।’
’শফিক ও মিলন সোহরাবের দুই পা ধরেন, তুহিন মাথা ধরেন, শিপন ডানহাত ধরে রাখেন। প্রথমে শিপন এবং পরে কবির সোহরাবের গলায় ছুরি চালিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় নিহত সোহরাবের মা রিনা বেগম বাদি হয়ে কবিরসহ ১১জনের বিরুদ্ধে বেলাবো থানায় হত্যা মামলাটি করেন। বেলাবো থানা পুলিশ মামলাটির তদন্তের সময়ে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে নরসিংদী জেলার পিবিআই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেয়।
পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুবেল শেখ মামলাটির তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত আসামি কবিরসহ তিনজন এবং এজাহারের বাইরে আরো দুইজনসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন। পিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে রিনা বেগমের নারাজির প্রেক্ষিতে আদালত গত ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হয়।
সিআইডি মামলাটির তদন্তকালেই পলাতক আসামি কবির মিয়াকে অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের মাওনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
সান নিউজ/এআর