নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন মাপের প্লট দেয়ার কথা বলে প্লটপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে নেওয়া হতো। প্লট দেওয়ার নামে এমন প্রায় পাঁচ হাজার চুক্তি করেছে নাসিম রিয়েল স্টেট। রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কথা বলে একেক জনের কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হতো। এভাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন নাসিম রিয়েল স্টেটের মালিক মো. ইমাম হোসেন নাসিম।
৫৫টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক এই আসামিকে গতকাল বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার সালমাকেও। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় একটি ৭.৬৫ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, নগদ জাল এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ১৪'শ পিস ইয়াবা, দুই বোতল বিদেশি মদ, চারটি ওয়াকিটকি সেট, ছয়টি পাসপোর্ট, ৩৭টি ব্যাংক চেক এবং ৩২টি সিম কার্ড।
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতারক নাসিমের বাবা-দাদার বাড়ি ভোলায়। দেশ স্বাধীনের আগে তার বাবা বেলায়েত হোসেন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। তাকে নিয়ে তার বাবা রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে মিরপুর এলাকায় সে পড়ালেখা করে। সে নিজেকে গ্রাজুয়েট দাবি করে। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮২ বা ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিতাসের তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে। এরপর ২০০২ সালে নাসিম রিয়েল এস্টেট নামে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গড়ে তোলে। সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় সাইনবোর্ড দিয়ে কিছু খাস জমি, দখল করা জমি এবং পানি ভরা জমি দেখিয়ে স্বল্পমূল্যে জমি পাওয়া যাচ্ছে বলে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। প্লটপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার চুক্তির কথা আমরা জানতে পেরেছি। রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করে এক একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নিয়েছে। সব মিলিয়ে এভাবে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথা জানতে পেরেছি।’
ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার শিকার মানুষদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেত নাসিম। অনেক সময় অস্ত্র ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে নিজের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতো। গ্রেপ্তার এড়াতে আন্ডারগ্রাউন্ডে তার গোপন সুড়ঙ্গে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্বলিত দরজাযুক্ত গোপন অফিসে আত্মগোপনে থাকত। নাসিমের অনুপস্থিতিতে তার তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার প্রতারণার ব্যবসা দেখাশোনা করত।
মোজাম্মেল হক আরও বলেন, নাসিম ৫৫টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ভূমিদস্যুতা, মাদক ও জালটাকা মামলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে স্ত্রীর সহযোগিতায় ইয়াবা ও বিদেশি মদ সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডিলার ও খুচরা মাদক কারবারিদের কাছে বিক্রি করত। এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোটের ব্যবসা পরিচালনা করতো।’
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নাসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদকসহ প্রতারণার চারটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রতারিত ভুক্তভোগীরা র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। যারা মামলা করতে ইচ্ছুক, র্যাব-৪ তাদের প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত।