নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঝালকাঠি: আওয়ামী লীগ নেত্রী ও বিএনপি নেতা মিলে নারীর চুল কেটে নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতিত নারীকে তার স্বামীর জিম্মায় পুলিশি নিরাপত্তা দিতে ঝালকাঠির পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল্লাহ বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩১ ধারার বিধানমতে এ আদেশ দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাবিবুল্লাহ শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ এখনও আমরা হাতে পাইনি। নির্দেশ হাতে পেলে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা হবে।’
গত ৩০ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমীন মৌসুমি কেকার নেতৃত্বে নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। রাতে শহরের পূর্বচাঁদকাঠি এলাকার ব্যবসায়ী মো. বোরহান উদ্দিন খানের দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীনকে (৩০) জেলা পরিষদের সামনের একটি বাড়িতে মারধর এবং সেখান থেকে তুলে এনে পূর্বচাঁদকাঠির একটি বাড়িতে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শেষে চুল কেটে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় নির্যাতিত নারী গত ১৭ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শারমীন মৌসুমি কেকা, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করেন। আদালত ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দেন। ওই দিন রাতেই ঝালকাঠি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশ্লিস্ট ধারায় মামলা রেকর্ড হয় । মামলা দায়েরের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মিন্টু মিয়া ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভির ফুটেজ হার্ডডিস্কসহ জব্দ করেন। মামলা দায়েরের আগে ১৭/১৮ দিন ওই নারী গ্রামের বাড়িতে অবরুদ্ধ ছিলেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্যাতিত নারীর আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম আসামিদের অব্যহত হুমকির কারণে আদালতে ভিকটিমের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। আদালত জিআর ১৭৬/২০২০ (ঝাল) মামলার নথি তলব করে শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারকে নিরাপত্তার আদেশ দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শহিদুল্লাহ আদেশে উল্লেখ করেন, ‘নির্যাতিত নারীর বক্তব্য অনুসারে এ মামলার আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ঝালকাঠি শহরের ত্রাস বলে খ্যাত। তাছাড়া আদালতের সামনে ভিকটিম পারভীনকে হাজির করা হলে তার মাথার চুল কাটা দেখা গেছে। ভিকটিম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়। এমতাবস্থায় ভিকটিমকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩১ ধারার বিধানমতে নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন।ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাদীপক্ষের দরখাস্ত মঞ্জুর করা হলো। বাদীকে তার স্বামীর হেফাজতে রেখে প্রয়োজনীয় সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে ঝালকাঠির পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হলো। আদেশের অনুলিপি অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঝালকাঠির পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হোক।’
থানায় মামলা রেকর্ডের পর আটদিন পার হলেও পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার না করায় মামলার বাদী ও সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় আদালতে নিরাপত্তার আবেদন জানান।
নির্যাতিত নারী পারভীন বলেন, ‘আদালতে মামলা করার আগে আমি ঝালকাঠির পুলিশ সুপারসহ নানাজনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কোনো বিচার পাইনি। এখন আদালতই আমার শেষ ভরসা।’
সান নিউজ/ এআর