নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশাল: দলিল লেখক রিয়াজ হত্যাকাণ্ডের জটিলতা শেষ হচ্ছেই না। নিহত রিয়াজের ভাই, স্ত্রী এবং থানা পুলিশের ত্রিমুখী পরস্পরবিরোধী অবস্থানে একের পর এক রহস্য তৈরি হচ্ছে মামলাটি ঘিরে।
সর্বশেষ সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিহত রিয়াজের স্ত্রী, শ্যালক ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রিয়াজের বড় ভাই ও হত্যা মামলার বাদী মনিরুল ইসলাম রিপন।
জিডিতে রিপন দাবি করেছেন, দলিল লেখক রিয়াজকে পরকীয়া প্রেমিকসহ পরিকল্পিতভাবে খুন করার পর এখন জমি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা। এতে সহায়তা করছেন লিজার ভাই ইমন ও বাবা দেলোয়ার খান। পাশাপাশি ভাড়াটিয়াদের হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ তোলেন মনিরুল।
তিনি বলেন, ‘আমার মৃত ভাইয়ের প্রাপ্ত সম্পত্তি দখলে নিতে দফায় দফায় চেষ্টা ও পরিকল্পনা করে যাচ্ছেন তারা। জমিতে এসে হত্যার হুমকিও দিয়ে গেছেন। গালিগালাজ করে গেছেন। আমরা পরিবারসহ এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।’
গত ০৭ সেপ্টেম্বরও বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর গ্রামের রিয়াজ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তার বড় ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন। মামলাটির তদন্ত ও এর অগ্রগতির প্রশ্নে বেশ কিছু অসঙ্গতি এবং পুলিশের বিরুদ্ধে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে আদালতের অনুমতি ছাড়াই হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে পক্ষপাতহীন তদন্তের দাবিও জানান তিনি।
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনের সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন রিপনের নিহতের আরেক ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম রুবেল, খালাতো ভাই শাখাওয়াত সিকদার ও সিদ্দিক, ভাগ্নে আসিফ হাওলাদার ও বাদীর স্ত্রী রেবেকা সুলতানা।
গত বছরের ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে নিজ ঘরে খুন হন দলিল লেখক রিয়াজ। এ ঘটনায় মামলা হলে তার স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। লিজা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তার পরকীয়া প্রেমিক ও স্বামীর সহকারী মাসুম হোসেন দা দিয়ে কুপিয়ে ঘুমন্ত রেজাউল করিম রিয়াজকে হত্যা করেন। এ সময় স্বামীর অন্য সহকারী হাবিব বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরেন। এর আগে তিনি (স্ত্রী) রিয়াজকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৬টি ঘুমের ওষুধ কৌশলে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে রাখেন, যা খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়েন রিয়াজ। ওই অবস্থায়ই কুপিয়ে খুন করা হয় রিয়াজকে।
মনিরুল ইসলাম রিপন বলেন, তার ভাই নিহত রিয়াজ দুটি বিয়ে করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ১০ বছর সংসার করেছেন। কিন্তু কোনো সন্তান জন্ম নেয়নি। দ্বিতীয় বিয়ের চার বছরেও কোনো সন্তান রিয়াজের ঔরসে জন্ম হয়নি। কিন্তু রিয়াজ খুন হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত রিয়াজের দ্বিতীয় স্ত্রী লিজা আক্তার কারান্তরীণ থেকেও সন্তান জন্ম দেন, যা সন্দেহজনক। তাছাড়া মামলার শুরুতে পুলিশের কাছে লিজা স্বীকার করেছেন, তিনি পরকীয়ায় আসক্ত এবং তার পরকীয়া প্রেমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। অন্য এক ব্যক্তিকে নিয়ে মোট তিনজনে মিলে রিয়াজকে গলা কেটে হত্যা করেন। হত্যার পর থেকে রিয়াজের সহকারী মাসুম ও হাবীব পলাতক। কিন্তু পুলিশ আজও সেই পরকীয়া প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেনি, যা রহস্যজনক।
জামিনে মুক্ত হয়ে পুলিশ নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করেছে বলে দাবি করেন হত্যায় অভিযুক্ত আমিনা আক্তার লিজা। আবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা তিনজন ছিঁচকে চোরকে গ্রেপ্তার করে তারা রিয়াজকে খুন করেছেন বলে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার তথ্য আদালতে উপস্থাপন করেছেন।
তবে দায়িত্বে অবহেলা এবং লিজাকে নির্যাতনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় কোতোয়ালি থানা পুলিশের দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এতোকিছুর পরে নতুন করে আবার থানায় জিডি করা হলো রিয়াজ হত্যাকাণ্ড নিয়ে।