ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় সক্রিয় কিশোর গ্যাংগুলো এখন রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। চায়ের দোকান, বিভিন্ন সড়কে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক দলের সদস্য ঘোরাঘুরি করে।
আরও পড়ুন: রেমালের তাণ্ডবে ৭ জনের মৃত্যু
চায়ের দোকানগুলোয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডায় মেতে থাকে তারা। স্কুল-কলেজ ছুটির সময় এদের উৎপাতে অস্থির হয়ে ওঠেন সেখানে আগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তরুণীদের উত্ত্যক্ত করা থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, মাদক বহন, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ হত্যাকাণ্ডেও রয়েছে তাদের সম্পৃক্ততা।
এলাকাভিত্তিক ছোট-বড় গ্যাং তৈরির মাধ্যমে দলগতভাবে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে এসব কিশোর সন্ত্রাসী। ভালুকায় অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের ৩ শতাধিক উচ্ছৃঙ্খল কিশোর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো পৌরশহর। এদের উৎপাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পুরো উপজেলার মানুষ।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে কিশোর গ্যাংয়ের খুরের আঘাতে রাতুল পাঠান (১১) নামে এক শিক্ষার্থী আহত হয়। উপজেলা পরিষদের সামনে চা দোকানদার শকিকুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল আহমেদ জিহাদ উপজেলার ভাটগাঁও গ্রামের এমদাদ পাঠানের ছেলে গোয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র রাতুল পাঠানকে বই মেলার উত্তর পাশে ডেকে নিয়ে টাকা দাবি করে। এ সময় টাকা দিতে অস্বীকার করায় রাতুলের গলায় খুর দিয়ে আঘাত করে।
আরও পড়ুন: উত্তাল সাগরে গোসল করছেন পর্যটকরা
পরে খোঁজ পেয়ে স্থানীয়রা আহত রাতুলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ভালুকা সরকারী হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত রাতুলের বাবা এমদাদ পাঠান বলেন, তার ছেলেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার গলায় ১৮টি সেলাই দিতে হয়েছে।
পৌর ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, উঠতি বয়সের কিশোরদের মোটরসাইকেলের দাপটে সড়কে ঠিকমতো হাঁটাও যায় না।
এলাকার আরেক ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান বলেন, ছোট ভাই বা ছেলের বয়সি কিশোরদের দলবদ্ধ আড্ডায় মহল্লার দোকানপাট ও ব্যবসা করা দায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে ভালুকা মডেল পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও কমছে না মাদকের আগ্রাসনসহ নানা অপরাধ। এখানে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ে হাতিয়ায় ১৪ গ্রাম প্লাবিত
তবে এলাকাবাসীসহ অভিজ্ঞমহলের অভিযোগ, এলাকার সর্বত্রই অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধীদের মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্যথায় পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা ছাড়া এভাবে নিয়ন্ত্রণহীন দৃশ্যমান অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কোনো অবকাশ নাই। উঠতি বয়সের এসব মাস্তানের পাশাপাশি ভালুকায় সন্ত্রাসী ও টপ টেররদেরও দৌরাত্ম্য চলছে।
এ বিষয়ে ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ কামাল আকন্দ জানান, কিশোর গ্যাংকে দমন ও গ্রেফতারে তারা সক্রিয়। যে কোনো অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমরা ভালুকা থানার প্রতিটা এলাকায় অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, যেন তারা তাদের উঠতি বয়সি সন্তানের প্রতি লক্ষ রাখেন।
সান নিউজ/এনজে