নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এ কে এম এনায়েত হোসেনের গাড়ি চালাতেন।
র্যাব জানায়, মালেক ড্রাইভার নামে পরিচিত এই ব্যক্তির শতকোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি, চাঁদাবাজি, জাল টাকার কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর কাছ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার জাল নোট এবং একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তুরাগের কামারপাড়ার ৪২ নম্বর বামনের টেক হাজী কমপ্লেক্সের তৃতীয়তলার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, জাল টাকার কারবার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তিনি শক্তির মহড়া ও দাপট প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন।
র্যাব মালেক ড্রাইভারকে স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের গাড়ি চালাতেন জানালেও খোঁজ নিয়ে জেনেছে, তিনি গাড়িচালক ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এ কে এম এনায়েত হোসেনের। অধ্যাপক এনায়েত জানান, ‘মালেক গত চার বছর ধরে আমার গাড়ি চালাচ্ছেন।’
অন্যদিকে গতকাল রাতে স্বাস্থ্যের (সেবা) সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মালেক কখনো আমার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুলের গাড়িচালক ছিলেন।’
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তারা জানান, মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের একজন গাড়িচালক এবং একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। তিনি ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়িচালক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালেকের স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাততলা ভবন আছে। ধানমণ্ডির হাতিরপুল এলাকায় ৪ দশমিক ৫ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০তলা ভবন আছে এবং দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে। র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, মালেক ড্রাইভারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও জাল টাকার দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরো মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
মালেক তার মেয়ে নৌরিন সুলতানা বেলিকে অফিস সহকারী পদে, ভাই আব্দুল খালেককে অফিস সহায়ক পদে, ভাতিজা আব্দুল হাকিমকে অফিস সহায়ক পদসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয়কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাকরি দিয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম গত বছরের ২২ অক্টোবর তাকে দুদকে তলব করেন। তবে তার বিরুদ্ধে দুদক এখনো অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি।
সান নিউজ/আরএইচ/ এআর | Sun News