মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ হয়ে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার হচ্ছে কয়েকশত মণ জাটকা ইলিশ। এছাড়া টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির সংলগ্ন বাজারে প্রতিদিন ভোরে বসছে রমরমা জাটকা ইলিশ বিক্রির হাট।
আরও পড়ুন: আজ ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভোরে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেশনাল মোড় থেকে ১২০০ কেজি জাটকাসহ একটি পিক্যাপ জব্দ করলে জাটকা বিক্রির চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন দিঘীরপাড় বাজারে ভোর হলেই বসছে জাটকা ইলিশের হাট। বাজারের ৪২টি আড়তের কমবেশি সবাই জাটকা ইলিশ বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বাজারে কয়েকশত মণ জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া দিঘীরপাড় পাশের রাকিরকান্দি খানকা শরিফের পাশে প্রতিদিন ভোর রাত ৪ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত বসে জাটকা বিক্রির হাট। ওই স্থানে জাটকা বিক্রির হাট বসান দিঘীরপাড় এলাকার আক্কাস খায়ের ছেলে নুরু খান। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাসাইল ঘাটেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে জাটকা ইলিশ।
আরও পড়ুন: ২ বিভাগে বৃষ্টির আভাস
এ সমস্ত ঘাটগুলো থেকে জাটকা কিনে স্থানীয় হাট বাজারসহ গ্রামে গ্রামে হেঁটে বিক্রি করছে মাছ ব্যবসায়ীরা। তবে জেলার হাট বাজারের চেয়ে প্রতিদিন ট্রাক-পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে জাটকা ইলিশ।
প্রতিদিন মুন্সীগঞ্জের পদ্মা ও মেঘনা নদীসহ শরিয়তপুর, চাদঁপুর, মাদারীপুর এলাকার পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে বিপুল পরিমাণ জাটকা ইলিশ ধরছে জেলেরা। পরে নদী থেকে সংগ্রহ করছেন কতিপয় মাছ ব্যবসায়ী।
এর মধ্যে সদর উপজেলার কালিরচর এলাকার বাচ্চু মেম্বার এর ছেলে রিপন ও শরিয়তপুর জেলার কাঁচিকাটা এলাকার বাদশা খান অন্যতম। এই ২ মাছ ব্যাবসায়ীর হাত ধরে প্রতিদিন কয়েকশত মণ জাটকা পাচার হচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কতিপয় ব্যক্তি বলেন, প্রতিদিন পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে বিপুল পরিমাণ জাটকা ইলিশ ধরা হচ্ছে। গভীর নদী থেকে রিপন ও বাদশা খানসহ মাত্র কয়েকজন পাইকার রয়েছে জাটকা কিনেন।
আরও পড়ুন: আগামীকাল দেশে ফিরছেন রাষ্ট্রপতি
বেশি পাইকাররা জাটকা মাছ না কেনায় নামমাত্র মূল্যে জেলেরা বাধ্য হয়ে তাদের কাছে জাটকা বিক্রি করছেন। রিপন মালয়েশিয়া থাকেন। তিনি শুধু জাটকা বিক্রির মৌসুম শুরু হলে মালয়েশিয়া থেকে এসে জাটকা বিক্রি শুরু করেন। জাটকা বিক্রির মৌসুম শেষ হলে তিনি আবার মালয়েশিয়া চলে যান।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ট্রাক-পিক্যাপ ভরে জাটকা বিক্রি করছেন রিপন গংরা। প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন স্থানের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টাকা দিচ্ছে রিপন গংরা। বিভিন্ন মানুষকে ম্যানেজ করেই তারা জাটকা ইলিশ বিক্রি করছে।
রিপন গংরা জাটকা বিক্রির মৌসুমে কোনোদিনই থেমে থাকে না। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়ে এপ্রিল মাস পর্যন্ত জাটকা বেঁচেন তারা।
মাঝে মধ্যে প্রশাসন কড়াকড়ি করলে রিপন-বাদশা গংরা কখনো এম্বুলেন্সে করে কখনো মাছের উপরে অল্প কিছু কাঁচা তরকারী দিয়ে তার মধ্যে মাছ লুকিয়ে বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন: এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যার চেষ্টা
মাছ যখন বিক্রি হয় তখন মাছ বোঝাই গাড়ির আগে বেশ কিছু মোটরসাইকেল থাকে। এ সমস্ত মোটরসাইকেল ট্রাকের আগে গিয়ে রাস্তার সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখে সিগন্যাল দেয়।
রিপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাটকা ইলিশ বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার বাপ-দাদারা এ ব্যবসা করে আসছে। আমিও করি। তবে তিনি খুব অল্প পরিমাণ জাটকা সিএনজি দিয়ে বিক্রি করেন বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে অপর জাটকা ব্যবসায়ী কাচিকাটার বাদশা খান, তিনিও জাটকা বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ বছর ব্যবসায় অনেক লসে আছি। ব্যবসা ভালো নেই। বেসনাল এলাকায় তার মাছের গাড়ির আটকের বিষয়টিও সে স্বীকার করে বলে শুধু আমার মাছ আটক করেনি। ওই গাড়িতে অন্যদের মাছও ছিল।
আরও পড়ুন: গাজায় ত্রাণ পাঠাল বাংলাদেশ
দিঘীরপাড় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. শাহ আলম বলেন, জাটকা বিক্রি বন্ধ করা মৎস্য কর্মকর্তার কাজ। যখন আমার কাছে তারা সাহায্য চাইছে, আমি তাদের সাহায্য করছি। এ বছর মৎস্য কর্মকর্তারা ৩ দিন অভিযান পরিচালনা করেছে। ৩ দিনই আমি তাদের আমার পুলিশ সদস্য দিয়ে সাহায্য করেছি।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এটিএম তৌফিক মাহমুদ বলেন, আমরা তো প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু আমাদের লোকবল কম। তাই অনেক বেশি অভিযান পরিচালনা করতে পারি না।
পুলিশ কি মৎস্য কর্মকর্তাদের ছাড়া অভিযান পরিচালনা করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনে একজন এসআই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারেন বলে তিনি জানান।
সান নিউজ/এনজে