কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : সম্প্রতি গত বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের আগুনে অন্যদের মধ্যে নিহত হয়েছেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুন নামে এক নারী সাংবাদিক। অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে এই নারী সাংবাদিকের পরিচয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। ফলে ডিএনএ পরীক্ষা ও আদালতের নির্দেশ ছাড়া সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুনের লাশ হস্তান্তর করা হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই সাংবাদিককে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামেই চিনতেন তার সহকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন : ভালুকায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুন নামে এই নারী সাংবাদিকের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি ২০২৩ সালের ২৮জুলাই লিখেছেন—তোমার ঈশ্বরকে জানিয়ো, আমি যেন তোমায় ক্ষমা করতে পারি। কারণ, আমার ঈশ্বর তোমায় ক্ষমা করতে শেখায়নি।
২০২২ সালের ১১মার্চ লিখেছেন—'এবার যখন ফিরবে, ভীষণ রকম ভেঙে ফিরো যেন তোমায় আমি নিজের মতো গড়ে নিতে পারি'।
একই বছরের১৩ অক্টোবর অভিশ্রুতি শাস্ত্রী তার ফেসবুকে লিখেন—'সবসময়ের জন্য নয়, তুমি নাহয় হঠাৎ করেই আমার হয়ে যাও, ভোর রাতের আকস্মিক চুমু হও, গোধূলীর আবছার মতো ধূপ করে জড়িয়ে, রাতের অন্ধকারের মতো আমাতে মিশে যাও, তবুও তুমি হঠাৎ হঠাৎ করেই আমার হও'!
আরও পড়ুন : ডাকাতের হামলায় পুলিশ আহত
২০২১ সালের ১৯আগস্ট অভিশ্রুতি শাস্ত্রী তার ফেসবুকে লিখেন—'আমাদের অনেক কিছুতেই মিল ছিলো, একসঙ্গে রবী ঠাকুরের গান শোনা থেকে শুরু করে ড্রেস পর্যন্ত মিলে যেতো, তুমি মাঝে মাঝে বলতে, এটাতো আরো অনেক মানুষের সঙ্গে মিলে গেছে তাই বলে কি ওদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হবে নাকি!!
আদতেও কি আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিলো? আমাদের তো শুধু সবকিছুতে মিল ছিলো। আমরা চাইলেই পারতাম, যেমন করে চাইতাম আমাদের সবকিছু মিলুক। শুধু নিজেদেরকে কেন জানি মেলানোর চেষ্টা হয়নি সবকিছু মিলেছে, শুধু নিজেদেরকে চাওয়ার ইচ্ছেটাই মিলেনি।
একই বছরের ২৮ আগস্ট অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ফেসবুকে লিখেন—'আমি চাই আমারে আর কেউ না ডাকুক, ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক আমারে কেউ না বলুক আমার আমি ছাড়া আর কাউরেই সাড়া দিতে ইচ্ছে করে না।
আরও পড়ুন : গ্যাসের পাইপ ফেটে সড়কে আগুন
জানা গেছে, নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি খাতুন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম গ্রামের পশ্চিমপাড়ায়। তার বাবার নাম শাবরুল আলম সবুজ ওরফে সবুজ শেখ।
২০২১ সালের ৬ জুলাই ইস্যু করা জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম বৃষ্টি খাতুন হিসেবেই রয়েছে। সেখানে পিতার নাম সবুজ শেখ এবং মাতার নাম বিউটি বেগম। কলেজের প্রবেশপত্র এবং রেজিস্ট্রেশন কার্ডেও একই রকম তথ্য আছে।
২০২২ সালের ১২ মার্চ ইস্যু করা জন্মনিবন্ধন সনদে তার নাম বৃষ্টি খাতুন হিসেবেই রয়েছে। বাবার নাম লেখা হয়েছে সবুজ শেখ এবং মায়ের নাম বিউটি বেগম। তবে ওই সাংবাদিককে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে চিনতেন তার সহকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও তাকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পাওয়া গেছে।
অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ নামের একটি নিউজ পোর্টালে কাজ করতেন। গেলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। নির্বাচন কমিশন বিটের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক ছিলেন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের আগুনে অন্যদের সঙ্গে তিনি মারা যান।
সান নিউজ/এমআর