গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলায় ছোট-বড় মিলে ১৬৫টি চর ও দ্বীপচর রয়েছে। গাইবান্ধার প্রায় ৩৫ শতাংশই নদী ও চরাঞ্চল। জেলার মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মানুষের বসবাস সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের ১৬৫টি চর-দ্বীপচরে।
আরও পড়ুন: আকতার যেন সকল কাজের কাজী
সেখানে অন্তত ৪৭ শতাংশ মানুষেরই জীবনমান দারিদ্র্য সীমার নিচে। বন্যা, নদীভাঙন, শৈত্যপ্রবাহ ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেই কেটে যায় এসব মানুষের জীবন। এখানে যেন জীবন চলে জীবনের প্রয়োজনে।
চলতি মৌসুমে গাইবান্ধার সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, সুন্দরগঞ্জের তিস্তা, ফুলছড়ি ও সাঘাটা যমুনার নদী পানি শুকিয়ে জেগে উঠছে অসংখ্য চর। এসব বালুচরে অনেক আগে থেকেই বাদাম চাষ করে আসছে চাষিরা।
তবে আগের তুলনায় এবারে অনেক বেশি বাদাম চাষে ঝুঁকছেন তারা। গত বছর বাদামের বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষকগণ।
আরও পড়ুন: ভালুকায় শিশুর লাশ উদ্ধার
উজানের পাহাড়ি ঢলে জমিতে পলি পড়ায় এ বছর বাদাম চাষ গত বছরের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কয়েকটি চরে, ধু ধু বালুচর সবুজে ছেয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু বাদামের চাষ।
সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের সিদাই, বাজে চিথুলিয়া, কড়াইবাড়ি, বাটিকামারি, হাঁস ধরা, চিথুলিয়া দীঘরসহ বিভিন্ন চরে ব্যাপক বাদামের চাষ হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ীর, আলগা, জিগাবাড়ি, গাবগাছি, খাটিয়ামারির চর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লাটশালা, কাপাসিয়াচর, বালাসেরা, কাজিয়ার চরাঞ্চলেও বাদাম চাষ হয়েছে।
আরও পড়ুন: শীত কমার আভাস
এলাকাবাসী জানান, আগে চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু ও সবজি ছাড়া কিছুই চাষ হতো না। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে উত্তরের উজানের ঢলে নেমে আসা পলিতে বাদাম চাষের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চরাঞ্চলের কৃষকরা এখন বাদাম চাষে ঝুঁকছেন। খুব কম সময়ে বাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা।
প্রতিবছর বন্যা পরবর্তী সময়ে জেগে ওঠা পলি মাটির চরে বসবাস করা মানুষ বাদাম চাষ করেন। খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ২০-২২ হাজার টাকা লাভ হয়ে থাকে তাদের।
বাদাম ক্ষেত থেকে আগাছা কেটে তাদের গবাদিপশুকে খাওয়ানো হয়। ফসলের মতো বাদামের জমিতে তেমন সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। বীজ রোপণের আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যেই বাদাম সংগ্রহ ও হাট-বাজারে বিক্রয় করা যায়।
আরও পড়ুন: বিএনপি আন্দোলন করতে ব্যর্থ
সদর উপজেলার ইউনিয়নের সিদাই চরের বাদাম চাষি মতিন মিয়া বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করা হচ্ছে। গত বছর ভালো দাম পাওয়ার চলতি মৌসুমে ৭ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ভালো ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফুলছড়ি উপজেলার এ্যারেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের জিজ্ঞাসাবারী চরের কৃষক রাজু মিয়া বলেন, অল্প খরচে বাদাম চাষ করা যায়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ দ্বিগুণ। প্রতি একরে খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। বাদাম তুলে রোদে শুকিয়ে অনেকদিন রাখা যায়। তাছাড়া বাদাম সারাবছরই বিক্রয় করা যায়।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর চরিতাবাড়ী গ্রামের কৃষক ফুলমিয়া বলেন, নদীভাঙনে দিশেহারা মানুষ আমরা। ধানের চেয়ে গত কয়েক বছর ধরে বাদামেই বেশি লাভ হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে ৩ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি।
আরও পড়ুন: মেডিকেল সেক্টরে কাজ করে মাফিয়া চক্র
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, জেলার চারটি উপজেলার চরাঞ্চলে ২০৭৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের বিনামূল্যে সার ও বাদামের বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে বাদাম চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরগুলোর চেয়ে চলতি বছর বাদাম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
সান নিউজ/এনজে