মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জে এ বছর দুই দফা বৃষ্টির পর আলুর জমিগুলোতে ব্যাপক আকারে পচন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ঘনঘন ঔষধ স্প্রে করেও রোগবালাই থেকে ক্ষেত রক্ষা পারছে না আলু চাষিরা। ফলে দুর্ভোগ যেন কিছুতেই পিছু হটছে না।
আরও পড়ুন: বনানীতে নবরূপে ‘এসপ্রেসো হাউস’
সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেশ কিছু আলু জমি ঘুরে দেখা গেছে, জমির আলু গাছগুলোর পাতায় ঠোসা পরেছে। অনেক জমিতে আলু গাছের কাণ্ড পচে গেছে। দামী দামী ব্যান্ডের ঔষধ ব্যবহার করেও রোগবালাইয়ের হাত থেকে আলু গাছগুলোকে রক্ষা করতে পারছে না কৃষক।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মোট ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ আলুই জেলা সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় আবাদ হয়েছে।
আরও পড়ুন: উলিপুরে বই কিনলে গাছ উপহার
সদর উপজেলার বজ্রযোগীনি, মামাসার, আটপাড়া, মহাকালী, চরকেওয়ার, মোল্লাকান্দি, আধারা এবং টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আউটশাহী, বলই, বালিগাঁও, পাঁচগাঁও, মান্দ্রা, মুটুকপুর, ধীপুর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ আলু জমির গাছগুলোর পাতায় ঠোসা পরে রয়েছে।
অনেক জমির আলু গাছের কাণ্ড পচে গাছগুলো মাটিতে মিশে গেছে। কৃষক দামী দামী ব্যান্ডের ঔষধ স্প্রে করছেন। তারপরেও ছড়িয়ে পড়েছে রোগবালাই।
সাধারণত নামী দামী ঔষধের ব্যান্ডগুলোতে ১২/১৫ দিন পরপর ঔষধ স্প্রে করার কথা বলা থাকলেও কৃষকরা প্রতি সপ্তাহে ঔষধ স্প্রে করছেন। ঔষধ স্প্রে ছাড়াও জমি পরিস্কার ও জমিতে সেচ প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বলই গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতি সপ্তাহেই ঔষধ স্প্রে করছি। তারপরেও আলু গাছে রোগ বেড়েই চলছে। ঔষধ কোম্পানীর লোকজন জমিতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঔষধ স্প্রে করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
আমরা তাদের শেখানো পদ্ধতিতে ঔষধ স্প্রে করছি। কিন্তু তারপরেও রোগবালাই বেড়েই চলছে।
সদর উপজেলার বজ্রযোগীনি গ্রামের কৃষক মো. মনির হোসেন বলেন, জমিতে ঔষধ দিয়েই চলছি। কিন্তু রোগবালাইতো কিছুতেই থামছে না। বাজারের সবচেয়ে দামী ঔষধ ২৫০ গ্রাম ৯০০ টাকায় কিনে জমিতে দিলাম। তারপরেও রোগবালাই বেড়েই চলেছে।
এ বছর আলু চাষ করতে গিয়ে দুই দফা বৃষ্টিপাতের কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন জেলার কৃষকরা। আলু বীজ পচে নষ্ট হয়।
আরও পড়ুন: রাতে বাড়তে পারে শীত
বৃষ্টিপাতের কারণে আলু চাষ এক মাসের অধিক সময় বিলম্ব হয়। আলু চাষের জন্য নভেম্বর মাস উত্তম সময় হলেও এ বছর জানুয়ারি মাসের অর্ধেক সময় পর্যন্ত জমিতে আলু চাষ করতে দেখা গেছে জেলার কৃষকদের।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা চেয়েও বেশি ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে মুন্সীগঞ্জে আলু আবাদ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৩ পণ্যের জিআই সনদ
যখন মুন্সীগঞ্জে ঘন কুয়াশা ও মেঘাচ্ছন্ন আবাহাওয়া ছিল, তখন আমাদের আলু গাছের গ্রো তেমন না থাকায় রোগবালাই গাছগুলোকে আক্রান্ত করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, এখন আবহাওয়া ভালো। কিন্তু তারপরও যদি রোগবালাই বা পচন রোগে আলু গাছ আক্রান্ত হয়। তাহলে একরোভেড এমজেড বা সিকিউর জাতীয় ঔষধগুলো সপ্তাহে একবার ভালোভাবে পুরো আলু গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
যদি গাছ পচন রোগে আক্রান্ত না হয়, তবে ডায়থেনএম-৪৫, একরোভেট এম-৪৫ জাতীয় ঔষধগুলো স্প্রে করতে হবে।
সান নিউজ/এনজে