ভোলা প্রতিনিধি: বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বোরো ক্ষেতে পানি দিতে পারছে না ভোলার ইলিশা ইউনিয়নের দেড় শতাধিক কৃষক। ফলে ১০০ একর জমির বোরো আবাদ বন্ধ রয়েছে। বোরো আবাদ করতে না পেরে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন: ৪ পণ্যে ভ্যাট-শুল্ক কমালো
এর আগে সড়ক ও জনপদ বিভাগ ব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে বিদ্যুতের পোল সরিয়ে নেয়। ব্রিজ নির্মিত হওয়ার পর সেই পোল পুনরায় নির্মাণ করে কৃষকদের সংযোগ না দেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের খামখেয়ালীপনার কারণে বোরো উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোলা সদরের ২ নং ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সী গ্রামের গাজুনিয়ার বিল এলাকার কৃষকরা। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
এ নিয়ে স্থানীয় কৃষক ও পল্লীবিদ্যুৎ কর্মীদের মধ্যে যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করছেন এলাকাবাসী।
আ. রহমান সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার ও সাবেক মেম্বার আ. রহমান হাওলাদার জানান, গত বছর ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের গুপ্তমুন্সীর কোব্বাত আলী হাওলাদার বাড়ীর দরজার ব্রিজটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
আরও পড়ুন: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা কাল
এ সময় তারা ব্রিজ সংস্কারের কাজের স্বার্থে পাশে থাকা বিদ্যুতের পোলটি (খাম্বা) সরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ হলেও খাম্বাটি আর নির্মাণ করা হয়নি। এতে ওই এলাকার সেচ কাজের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বর্তমানে বোরো (ইরি) চাষাবাদের মৌসুম শেষের দিকে। অথচ কৃষকরা তাদের সেচ প্রকল্পে পানি দিতে পারছে না বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায়। এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষকরা সম্মিলিতভাবে সড়ক ও জনপদ বিভাগে গেলে তারা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে বলে।
অন্যদিকে গত ৩ মাস ধরে কৃষকরা বিদ্যুৎ বিভাগে ধর্না ধরে আসছে। কিন্তু পল্লীবিদ্যুৎ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। ফলে বন্ধ হয়ে আছে সেচ কার্যক্রম এবং বোরো চাষাবাদ।
আরও পড়ুন: এক বিভাগে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে
ওই এলাকার কৃষক মো. মানিক মোল্লা জানান, অন্যান্য গ্রামে বোরো চাষাবাদ শুরু হয়ে গেছে। অথচ গুপ্তমুন্সী গ্রামের গাজুনিয়ার বিল এলাকায় এখনো শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া পানির অভাবে বোরোর বীজতলা শুকিয়ে গেছে। ধানের চারা মরে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, এ বছর তিনি ৩ একর জমি বোরো চাষের জন্য প্রস্তুত করেছেন। এতে তার লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে শুরু করতে পারছে না।
শুধু মানিক মোল্লা নন, এরকম দেড় শতাধিক কৃষকের অভিযোগ সময় মতো যদি তারা সেচের ব্যবস্থা করতে না পারেন তাহলে তাদের কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হবে এবং দেশও কয়েক হাজার মেট্রিকটন বোরো উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে।
কৃষক হারুন, মোসলেউদ্দিন মিজি বলেন, বোরোর চাষাবাদ করার জন্য তারা ধারদেনা করে, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যখন মাঠ প্রস্তুত করলেন ঠিক তখন বিদ্যুতের অভাবে সবকিছুই ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। যদি চাষাবাদ করতে না পারেন তাহলে একদিকে যেমন তারা খরচের টাকা তুলতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: মানুষ শখ করে পান্তা খায়
অন্যদিকে ধান না পেলে ভবিষ্যতেও না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হবে। কৃষকদের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশা। কবে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে আর সেচ দিয়ে বোরোর চাষাবাদ করতে পারবেন, যদি না পারেন তাহলে সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটাবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই কৃষকদের।
কৃষক সিরাজ উদ্দিন মিজি, মজির উদ্দিন মল্লিক, নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, সরকার যেখানে এক ইঞ্চি জমিও যেখানে খালি রাখা যাবে না বলে জানায় সেখানে এই বিলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আশিকুর রহমানের খামখেয়ালীর কারণে শতাধিক একর জমি যদি চাষাবাদ থেকে বাদ যায় তাহলে তার দায় দায়িত্ব পল্লী বিদ্যুতকেই বহন করতে হবে।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার এবি এম মোস্তফা কামাল বলেন, পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সি ব্লকের ম্যানেজার আব্দুর রহমানের স্কিমে একশ একর জমিতে বরো কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না বিদ্যুৎ সংযোগ এর অভাবে। ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগের পক্ষে কৃষকদের বিভিন্ন প্রনদনার সার, বীজ বিতরন করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে তারা বীজতলা তৈরি করেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ক্ষেতে পানি পাচ্ছে না। বরো ধান রোপন করতে পারছে না। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষে জোর দাবি করছি যেন দ্রুত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়।
এ বিষয়ে পল্লীবিদ্যু সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আশিকুর রহমানের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি কোন সদ উত্তর দেননি।
সান নিউজ/এনজে