মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকন্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়নের চর-মুক্তারপুর এলাকায় জাতীয় নির্বাচনের পরে সহিংসতার জের ধরে ১৫টি পরিবারের বিদুতের লাইন কেটে ওই সমস্ত পরিবারকে অন্ধকারে রাখার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল কাল
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার সোহাগ মিয়া, ইদ্রিস হাওলাদার, ওমর আলী, শামীম বেপারীর ঘরের বিদুতের লাইনের সংযোগ তার কাটা অবস্থায় রয়েছে। বিদুৎ না থাকায় ওই পরিবারগুলোসহ তাদের ভাড়াটিয়া মোট ১৫টি পরিবার চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এছাড়া বিদুতের তার কেটে নেয়ার ভয়ে স্বেচ্ছায় ওই গ্রামের কিরন মিয়াসহ আরও ৬টি পরিবার তাদের বিদুৎতের তার স্বেচ্ছায় খুলে রেখেছেন। এছাড়া নির্বাচনী সহিংসতার জেরে সোহাগ মিয়ার পরিবারের উপর হামলার পর রাতের আধাঁরে তার দুটি ট্রলার চুরি করার ঘটনাও ঘটেছে।
জানা গেছে, চর মুক্তারপুর গ্রামের শামীম বেপারী ও সোহাগ গংদের পরিবার গত জাতীয় নির্বাচনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রাথী হাজী ফয়সাল বিপ্লবের নির্বাচন করে আসছিল। তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল দেওয়ান, কামাল দেওয়ান, বিল্লাল দেওয়ান, মজিদ, সিরাজ গংরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থক ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশি থাকবে না
নির্বাচনে স্বতন্ত্র কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব জয়লাভ করলেও ওই এলাকার চর মুক্তারপুর ভোটকেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস জয়লাভ করে।
ওই কেন্দ্রে জয়লাভের পরেই স্বতন্ত্র প্রাথীর সমর্থক শামীম বেপারীর বাড়িতে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ৮ জানুয়ারি পুনরায় শামীম বেপারীর বাড়িতে হামলা চালায় ইসমাইল দেওয়ান, কামাল দেওয়ান, বিল্লাল দেওয়ান, জাহিদ, রিশাত, নিহাত, সাকিব, হৃদয়, আকাশ গংরাসহ ২৫-৩০ জন।
এ সময় তারা শামীমের ভাবি গর্ভবতী রহিমা বেগম, ভাতিজা তুহিন ও ভাতিজি ইমুকে মারধর করে এবং তাদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালায়। পরে এতে সদর থানায় দুইটি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়।
আরও পড়ুন: সীমান্তবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ
পরে একই ব্যক্তিবর্গ গত ১০ জানুয়ারি সোহাগ মিয়াকে বাড়ির পাশের রাস্তায় পেয়ে তার উপর হামলা চালায়। এ সময় সোহাগের মামাতো ভাই শাহ আলম হাওলাদার, শামীম ও আমিন সোহাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা হলে সোহাগ বাড়িতে না থাকায় গত ১২ জানুয়ারি সোহাগের বাড়ির পাশে শীতলক্ষা নদীতে রাখা দুটি ট্রলার চুরি করে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে গত ৩১ জানুয়ারি রাতে সোহাগের বাড়ির বিদুতের লাইন কেটে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন।
সোহাগের মা সালমা বেগম (৫৫) বলেন, আমার ছেলে সোহাগ কাঁচি মার্কার নির্বাচন করায় ইসমাঈল, কামাল দেওয়ানরা ১০০/১৫০ জন লোকজন নিয়ে আমার ছেলে সোহাগ ও আমার ভাইস্তাদের মারধর করছে, আমার ছেলের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশের জনগণ বিএনপির সাথে নেই
আমাদের দুইটা ট্রলার চুরি করে নিয়ে গেছে। আমার ছেলে জামিনে এসেও বাড়িতে ফিরতে পারছে না। ওদের ভয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছে। আমাদের বিদুতের লাইন কেটে দিয়েছে।
আমার বৌ অন্ধকারে না থাকতে পেরে বাবার বাড়ি চলে গেছে। ভাড়াটিয়ারাও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আমি ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী। বাড়িতে একা একা থাকি। বিদুৎ নাই। রাতে আমার ভয় করে, কখন জানি ঘরে একা মরে পরে থাকি।
অপর ভুক্তভোগী শামীম বেপারীর মা রুবিনা বেগম (৭০) বলেন, নির্বাচনের পরের দিন ওরা আমার বাড়িতে এসে আমার ছেলের ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বৌ, নাতি, নাতিনকে মারলো। আমি মারতে না করায় আমার পায়ের মধ্যে লাঠি দিয়ে ওরা আমাকে মারছে।
আরও পড়ুন: পিকুলকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে চায় স্থানীয় আ’লীগ
পরে রাতে আমার বিদুৎতের লাইন কেটে দিছে। আমি একমাস যাবৎ অন্ধকারে মোম জ্বালাইয়া থাকি। আমার ৩ টা গরু আছে। ওরা বলতাছে গরু জোড় কইরা নিয়া যাইবো। তাই রাতে ঘুমাই না। মোম জ্বালাইয়া আমি আর আমার স্বামী গরু পাহারা দেই।
পরে গত ৮ জানুয়ারি রাতে শামীমের বাড়ির বিদ্যুৎ লাইনের তার কেটে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। সেই থেকে প্রায় ১ মাস যাবৎ অন্ধকারে আছেন শামীমের পরিবার।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার ঘটনায় পঞ্চসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য শাহ্-আলম হাওলাদার বলেন, নির্বাচনে হেরেও আমার উপর হামলা, মামলা, লুটপাট চালাচ্ছে ইসমাইল দেওয়ান গংরা।
আরও পড়ুন: এসএসসির কেন্দ্রে যাবেন না নওফেল
আমার আত্নীয়ের দুইটা ট্রলার নিয়ে গেছে। এখন রাতের আঁধারে বৈদ্যুতিক তার চুরি করছে তারা। রাতে ঘরে থাকা বৃদ্ধা ও শিশুদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইসমাইল দেওয়ানরা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইসমাইল দেওয়ান বলেন, আমরা কারো বৈদ্যুতিক তার কাটিনি। প্রয়োজনে আপনারা অনুসন্ধান করে দেখেন। ওরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
চর-মুক্তারপুর বিদ্যুৎ ফ্রিগেটের ইনচার্জ নাম-পরিচয় না দিয়ে মুঠোফোনে বলেন, আমাদের বৈদ্যুতিক তার চুরির কোনো ঘটনা জানা নেই। যাদের তার চুরি হয়েছে, তারা বৈদ্যুতিক বিলের কাগজ নিয়ে অফিসে আসুক বলে ফোন কেটে দেন।
সদর থানার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনা ঘটলে থাকলে, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/এনজে