মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে সরকারি খাল ও সওজের জমি দখলের পর এবার এক বৃদ্ধার জমি দখলের জমি ভরাট করছেন মানিক রয়েল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন: অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ করা হবে না
তার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু পরিবারের রাখাল সরকার নামের এক ব্যক্তির জমি জোড় করে বিক্রি করতে বাধ্য করে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ারও মারধর রয়েছে।
জানা গেছে, লৌহজং উপজেলার খলাপাড়া এলাকায় কৃষি জমিসহ সরকারি খাল অবাধে ভরাট করে আবাসন প্রকল্প বানিয়ে বিক্রি করছেন মানিক রয়েল। এছাড়া আবাসন প্রকল্পে পড়া জমি বিক্রি করতে না চাওয়ায় ওই এলাকার রাখাল নামের এক লোককে মারধর করে সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন তিনি।
উপজেলার খেদেরপাড়া এলাকায় সড়ক ও জনপদের জমি ভরাট করে তিনি ভাড়া দিয়েছেন। আবাসন ব্যবসা করার জন্য উপজেলার কাজিরগাঁও এলাকায় নির্বিচারে কৃষি জমি ভরাটের পায়তারা করছেন রয়েল।
আরও পড়ুন: সন্ধ্যায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
এদিকে লৌহজং উপজেলার খেদেরপাড়া গ্রামের এক বৃদ্ধার পরিবারের ৬১ বছর ধরে ভোগ দখলে থাকা পৈত্রিক সম্পত্তি জোড় করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
ওই সম্পত্তি দখল করতে না পেরে জমির মালিক আমিন উদ্দিনের ছেলে সোহেলকে (৩৬) মারধর করেছেন। এ ঘটনায় লৌহজং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ অসৎ উপায়ে মালিকানা নিয়ে বিরোধীয় জমি অল্প দামে কিনে ভরাট করে বেশি দামে বিক্রি করে আসছেন মানিক রয়েল।
আবাসন প্রকল্প করতে গিয়ে একদিকে যেমন নির্বিচারে কৃষি জমি ভরাট করছেন, অন্যদিকে প্রকল্পে জোড় করে মানুষকে সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য করছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ
প্রকল্পের মধ্যে পরলে সরকারি সম্পত্তিও জোড় করে দখলে নিচ্ছেন। খলাপাড়া গ্রামে আবাসন প্রকল্প করতে গিয়ে তিনি ওই গ্রামের দুলাল মিয়ার বাড়ির সামনের সরকারি খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরি করেছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মানিক বেপারী বলেন, আমাদের খলাপাড়া গ্রামে আবাসন প্রকল্প বানিয়ে বিক্রি করছেন রয়েল। এই আবাসন প্রকল্পের রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে তিনি একটি সরকারি খাল ভরাট করে তার উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করেন।
সম্প্রতি লৌহজং উপজেলা খেদেরপাড়া বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে বৃদ্ধা আমিন উদ্দিনের জমি জোড় করে দখল করা চেষ্টা করেন রয়েল। ওই সম্পত্তি দখল করতে না পেরে ৬১ বছর ধরে দখলে থাকা সম্পত্তি মালিকদের মারধর ও হুমকিধামকি প্রদান করছেন রয়েল।
আরও পড়ুন: ফের স্পিকার হলেন শিরীন শারমিন চৌধুরী
ওই জমি দখলে থাকা ভোক্তভোগী মো. আলী আকবর (৫৫) জানান, আমার শ্বশুর মৃত হাফিজ উদ্দিন বেপারী ১৯৬৩ সালে এই সম্পত্তি ক্রয় সূত্রে মালিক হন।
আমি তার মেয়েকে ৩০ বছর আগে বিয়ে করার পর থেকে এই জমি চাষাবাদ করে ফসল ফলিয়ে জীবিকা চালাই। হঠাৎ রয়েল নামের এক ব্যক্তি এসে বলছে জমি তার এবং আমাদের জমি ছেড়ে দিতে। জমি নিয়ে আদালতে আমাদের একটি মামলা চলমান রয়েছে।
অপর জমির মালিক আমিন উদ্দিনের স্ত্রী কোহিনুর বেগম (৪৮) বলেন, আমার বিয়ের পর থেকে দেখছি আমার স্বামী এ জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফসল ফলিয়ে জীবিকা চালাইতে। আমরা গরীর মানুষ। এ জমিটুকু চাষাবাদ করে জীবিকা চলে। মানিক নামে এক ব্যক্তি জমিটি তার দাবি করে আমার ছেলেকেও মারধর করে।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই সম্পত্তির মালিক মৃত হাফিজ উদ্দিন বেপারীর ওয়ারিশ আমিন উদ্দিন বেপারী, মো. বাবুল বেপারী, সবেদা বেগম, নুরজাহান বেগম, হীরা বেগম, মনোয়ারা বেগম বিভিন্ন মৌসুমি ফসল চাষাবাদ করে জমিটি দখলে রেখেছেন।
আরও পড়ুন: ২ বিভাগে বৃষ্টির আভাস
তবে তারা দুই বছর আগে ২০২২ সালে ওই জমির খাজনা দিতে গেলে স্থানীয় ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে পারে তাদের পিতা মৃত হাফিজ উদ্দিন বেপারী নাম আরএস পর্চায় লিপিবদ্ধ না হয়ে এই জমি অন্য এক ব্যক্তির নামে আরএস রেকর্ড হয়েছে।
পরে তারা এ নিয়ে মুন্সীগঞ্জ যুগ্ন জেলা জজ ২য় আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ২৫৬ /২০২২ দায়ের করেছেন। কিন্তু যাদের নামে আরএস রেকর্ডে ওই সম্পত্তি রেকর্ড হয়েছে, তাদের থেকে কমদামে সম্পত্তিটি ক্রয় করে এখন আমিন গংদের সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা করছেন রয়েল।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মো. মানিক রয়েলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সওজ ও সরকারি খাল দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সওজ তাদের জমির উপরে সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে। আমি তাদের জমি দখল করিনি। সরকারি খাল দখলের বিষয়ে ভূমি অফিস বিষয়টি জানে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: দ্বাদশ নির্বাচনে জয় হয়েছে জনগণের
বৃদ্ধার জমি দখলের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই জমি আমি ক্রয় করেছি। আমি জমিটি ক্রয় সূত্রে মালিক। আমার কাছে বর্তমান সাব-রেজিস্টারকৃত দলিল ও নামজারি খাজনা পরিশোধের রিসিট রয়েছে।
এ ব্যাপারে লৌহজং উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) মো. ইলিয়াস সিকদার বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমি কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/এনজে