মাদারীপুর প্রতিনিধি: জমি জেলা প্রশাসকের, অথচ বহুতল ভবনের মার্কেট করার টেন্ডার দিয়েছে পৌর মেয়র। ঠিকাদারও দিনরাত কাজ করছে। তোহা বাজার হিসেবে ব্যবহৃত জেলা প্রশাসকের জমিতে এই কাজ করেছে মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভা।
আরও পড়ুন: গাঁজা-ইয়াবাসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেফতার
এদিকে স্থানীয় এক ব্যক্তির এই জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা চলমান আছে। প্রকল্পের টাকা লুটপাট করার জন্য জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় পৌর মেয়র এই কাজ করছে বলে বন্দর এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পরেছে।
জানা গেছে, মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী বন্দর টেকেরহাট বন্দর। এই বন্দরের বাজারের মধ্যে একটি খোলা স্থানে ৬০ বছর ধরে চলে আসছিল মাছ, মাংস ও সবজির বাজার। এই বাজারই তোহা বাজার হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুন: মা-বোনকে আটকে রেখে স্ত্রীকে হত্যা
বাংলাদেশ সরকারের হাট-বাজার গেজেটের ৬ এর ২ ধারার ৪ নং উপধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, হাট-বাজারের অভ্যন্তরে নির্ধারিত পরিমাণ জমি তোহা বাজার হিসেবে সংরক্ষণ করিতে হইবে, যাহা কোনো প্রকার বন্দোবস্ত প্রদান করা যাইবে না।
এই তোহা বাজারে মাদারীপুর ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে দুটি টলঘর নির্মাণ করে দিয়েছিল স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর। ব্যবসায়ীদের কোনো নোটিশ না করে হঠাৎ করে জেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে টলঘর দুটি ভেঙ্গে দিয়ে ‘জেলা প্রশাসকের জমি অনধিকার প্রবেশ নিষেধ’ লেখা একটি সাইনবোর্ড দিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: মাথায় আঘাত লেগে শ্রমিকের মৃত্যু
এর পরপরই তরিঘরি করে রাজৈর পৌরসভার ঠিকাদার বহুতল মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করে। জেলা প্রশাসনের এই উচ্ছেদ ও পৌরসভার ঠিকাদারের তরিঘরি করে কাজ শুরু করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কি জেলা প্রশাসন পৌরসভার মার্কেট নির্মাণের জন্যই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
পৌরসভার মার্কেট প্রজেক্টের টাকা নয়ছয় করতেই জেলা প্রশাসনের কিছু কর্মচারী ও কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে তোহা বাজারে অবৈধভাবে এ মার্কেট নির্মাণ করছে রাজৈর পৌরসভা। এতে রাজৈরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
আরও পড়ুন: হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
কেউ কেউ বলছে পৌরসভা মার্কেট করছে, এটা ভালই করছে। এই মার্কেটের প্রয়োজন আছে। আবার অনেকে বলছে, তোহা বাজার দখল করার অধিকার কারো নেই। পৌরসভা বাজারটি দখল করে মার্কেট করছে, এটা অন্যায়। প্রজেক্টের নামে মার্কেট নির্মাণ করে টাকা লুটপাট করতেই পৌরসভা এ কাজ করছে।
নোটিশ ছাড়া ও তোহা বাজারের টলঘর অকশন না দিয়ে জেলা প্রশাসনের হঠাৎ টলঘর ভেঙ্গে ফেলা এবং পৌরসভাকে কাজ করার সুবিধা করে দেয়াকে ভাল চোখে দেখছেন না কেউ।
আরও পড়ুন: শ্রমিক লীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ
এই তোহা বাজারের জমির মালিকানা নিয়েও আদালতে চলছে মামলা। সেই মামলার এখনো চুড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি আদালত। এ অবস্থায় কিভাবে জেলা প্রশাসন টলঘর ভেঙ্গে জেলা প্রশাসকের জমি দাবি করে সাইববোর্ড দেয়- এমন প্রশ্ন জমির মালিকানা দাবি করা মামলার বাদী মো. মহাসিন উদ্দিন হাওলাদারের।
তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, জেলা প্রশাসন যে জমি তার জমি বলে দাবি করে সাইনবোর্ড দেয় এবং অনাধিকার প্রবেশ নিষেধ করে সেখানে পৌরসভা প্রকাশ্যে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ কিভাবে শুরু করে। বিষয়টি তদন্ত করে এ অবৈধ কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
খালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুল শাহ আলম মিয়া প্রশ্ন করে বলেন, পৌর মেয়র কিভাবে জেলা প্রশাসকের জমিতে টেন্ডার দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করে। তিনি বলেন, সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: সৈকতে মদ খেয়ে মাতলামি, ৩ শিক্ষার্থী আটক
জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা যদি এ ধরণের অবৈধ কাজ করে তাহলে দেশে আইন বলে কিছু থাকবে না। জেলা প্রশাসনের জমি দখল করে যেভাবে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে রাজৈর পৌরসভা, তাতে প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলদারিতে উৎসাহ যোগাবে।
তোহা বাজার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি বলে মনে করেন রাজৈর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। অবিলম্বে এই কাজ বন্ধ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করার দাবি উপজেলা চেয়াম্যানের।
এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশিদ খান ও রাজৈর পৌরসভার মেয়র নাজমা রশীদ কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সান নিউজ/এনজে