রংপুর ব্যুরো: রংপুরে ভূমি কর্মকর্তার মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল এবং আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে বিধবার সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: বিএনপির আন্দোলন নেশাখোরদের হাতে
রোববার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর সিওবাজার কেল্লাবন্দের নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ঐ ভুক্তভোগী বৃদ্ধা। তিনি প্রভাবশালী ভূমিদস্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী রাহেলা বেগম জানান, আমি একজন ৬০ ঊর্ধ্ব বয়স্ক বৃদ্ধা। জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আমার ৩ ছেলে। ২ ছেলে চাকরি করেন বর্ডার গার্ডে। এক ছেলে চাকরি করেন কাস্টমস অফিসে।
তারা সকলেই চাকরির সুবাদে রংপুরের বাইরে থাকেন। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি ও ছেলের বউসহ কেল্লাবন্দ সিও বাজারের বাড়িতে বসবাস করছি।
আরও পড়ুন: আরও ৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৭১
আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি, যার মামলা নং ১৬৯/২০০৫ এ ডিক্রী প্রাপ্ত হয়ে ০৯/২০০৮ নং মামলা ছাড়াও ৩ বার রায়ের পর চতুর্থ বারে ডিক্রী জারীর মাধ্যমে আদালতের রায়ে আমরা জিতি। আদালত আমাদের নায়েব, নাজিব, ঢুলি ও পুলিশ স্কটের মাধ্যমে দখল বুঝিয়ে দেয়। আমরা সেখানে পাকাঘড় ও বাউন্ডারী ওয়াল নির্মান করি।
২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর দুপুরে এলাকার প্রভাবশালী সিদ্দিকুর রহমান লিটন ও তার আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আমার জমিতে বাউন্ডারী ও পাকাঘড় ভেঙে ফেলে এবং সবকিছু তছনছ করে দিয়ে জমি দখলের পাঁয়তারা করে। আমার ছেলেরা বাড়িতে না থাকায় আমি ও ছেলের বউ বাঁধা দিতে গেলে তারা আমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে আমার বউমা সাবরিনা আক্তার রিনা বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। সেই মামলাটি চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুন: পোশাক শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ
এছাড়া আমাদের আদালতের রায়ে পাওয়া জমির উপর প্রতিপক্ষ সিদ্দিকুর রহমান লিটন গং জোরপূর্বক কাজ শুরু করলে আমি পরে ১৫ নভেম্বর ১৪৪/১৪৫ ধারায় আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে এবং সেখানে আদালত ১৪৪ ধারা জারি করে।
পরে আদালত ভূমি অফিসের উক্ত সম্পত্তির উপর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলে তড়িঘড়ি করে ভূমি কর্মকর্তা সাদাত আহমেদ একটি মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, গত ১২ নভেম্বর নালিশি সম্পত্তিতে রংপুর ভূমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) রংপুর মহানগর রাজস্ব সার্কেল আহমেদ সাদাত উপস্থিত হয়ে আমাদের মূল অভিযোগ না শুনে সরকারী সার্ভেয়ার দ্বারা ভূলভাল মাপযোগ করেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচন পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি
তাতে দেখা যায়, উত্তর পার্শ্বে জমি না মেপে দক্ষিণ পার্শ্বে অন্য দাগ ৩৮৪, ৩৮৫, যাহার জমির মালিক নজরুল ইসলাম ও মাসুম মিয়ার দোকান পর্যন্ত দেখায়। এটা ঐ কর্মকর্তার একটা চক্রান্ত ও কারসাজি। এ ব্যাপারে আমি আবারও ঐ ভূমি কর্মকর্তাকে সঠিক মাপযোগ করার জন্য আবেদন করি।
আমার আবেদনটি গ্রাহ্য না করে আদালত চলাকালীন সময়ে তিনি তার প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করেন। আমার ১৩.৬৬ শতাংশ জমি কাগজ-কলমে ঠিক থাকলেও ভূমি অফিসের কারসাজি প্রতিবেদনের কারণে আজ আমাদের বারবার আদালতে রায়ে পাওয়া সম্পত্তি কেন প্রভাবশালীরা দখলে নিবে, এ বিষয়ে আমি আইনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) রংপুর মহানগর রাজস্ব সার্কেল আহমেদ সাদাত জানান, আমি এডিএম কোর্টের নির্দেশে সেখানে গিয়েছিলাম। রাষ্ট্রপক্ষের আমিন ও বাদী রাহেলা বেগমের আমিন সে দিন উপস্থিত ছিলেন। কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, মাপযোগ করে প্রতিবেদন দিয়েছি। তবে তিনি মনগড়া প্রতিবেদনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সান নিউজ/এনজে